সার্বিয়া হলো মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ, যা বর্তমানে কর্মসংস্থানের দিক থেকে বিদেশগামী বাংলাদেশিদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ সার্বিয়াতে বসবাস করছে এবং নির্মাণ, ফ্যাক্টরি, হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন পেশায় সফলভাবে কাজ করছে। সে কারণেই অনেকের মনেই সার্বিয়া যাওয়ার স্বপ্ন তৈরি হচ্ছে। তবে সার্বিয়াতে যাওয়ার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি জানা প্রয়োজন, তা হলো—সার্বিয়াতে বেতন কত এবং সেখানে কাজের সুযোগ কেমন।
সার্বিয়া একটি উন্নয়নশীল ইউরোপীয় দেশ হলেও এখানকার অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ স্থিতিশীল এবং বেকারত্বের হার তুলনামূলকভাবে কম। ফলে বাংলাদেশ থেকে কেউ যদি বৈধভাবে সার্বিয়া যান, তাহলে সাধারণত কাজ পেতে তেমন কোনো জটিলতার মুখে পড়তে হয় না। বিশেষ করে নতুন অভিবাসীদের ক্ষেত্রে, অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় সার্বিয়াতে শুরুতেই তুলনামূলক ভালো বেতন পাওয়া যায়, যা জীবনযাত্রা নির্বাহের পাশাপাশি সঞ্চয় করতেও সহায়ক।
আপনি যদি বর্তমানে বা ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে কাজ করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে সার্বিয়া হতে পারে আপনার জন্য একটি আদর্শ দেশ। এখানে একদিকে যেমন ভালো বেতন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তেমনি অন্যদিকে ইউরোপীয় মানের জীবনযাপন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করা সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে কয়েক বছর সার্বিয়াতে কাজ করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যায় এবং নিজের ক্যারিয়ারকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সম্ভব।
দুবাই থেকে সৌদি আরব যাওয়ার উপায় সর্বশেষ আপডেট ২০২৬
আজকের এই পোস্টে আমরা ইউরোপের দেশ সার্বিয়াতে বর্তমানে বেতন কত, কোন ধরনের কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এবং সার্বিয়াতে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য প্রয়োজনীয় আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। আপনি যদি সার্বিয়া সম্পর্কে সঠিক ও বাস্তবসম্মত ধারণা পেতে চান, তাহলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সার্বিয়া বেতন কত
সার্বিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা করার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হলো বর্তমানে সার্বিয়ায় কাজের বেতন কত তা আগেই জেনে নেওয়া। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কেউ বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সার্বিয়া গেলেও সেখানে গিয়ে প্রত্যাশিত বেতন পান না। এর ফলে মানসিক হতাশা তৈরি হয় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ব্যাহত হতে পারে।
এই ধরনের সমস্যা এড়াতে সার্বিয়া যাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত কোন কাজের বেতন কত। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা সার্বিয়ার বিভিন্ন জনপ্রিয় চাকরির আনুমানিক মাসিক বেতনের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছি। নিচের ছকটিতে আলাদা আলাদা কাজ অনুযায়ী সম্ভাব্য বেতনের পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে।
| কাজের নাম | আনুমানিক বেতন |
|---|---|
| রিসেপশনিস্ট | ৭৫,০০০ – ৯০,০০০ টাকা |
| ওয়েটার | ৮০,০০০ – ১,০০,০০০ টাকা |
| ডেলিভারি বয় | ৮০,০০০ – ১,২০,০০০ টাকা |
| ড্রাইভিং | ৬৫,০০০ – ৮০,০০০ টাকা |
| কনস্ট্রাকশন কাজ | ৭০,০০০ – ৯০,০০০ টাকা |
| ইলেকট্রিশিয়ান | ৬৫,০০০ – ৯০,০০০ টাকা |
| প্লাম্বিং | ৬৫,০০০ – ১,০০,০০০ টাকা |
| কৃষিকাজ | ৬৫,০০০ – ৮০,০০০ টাকা |
| অটোমোবাইল কাজ | ৮০,০০০ – ১,২০,০০০ টাকা |
উপরের সার্বিয়া কাজের বেতনের তথ্যগুলো বিভিন্ন বিশ্বস্ত অনলাইন সোর্স ও সার্চ ইঞ্জিনের তথ্যের ভিত্তিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে কাজের অভিজ্ঞতা, কোম্পানি, লোকেশন এবং সময়ের পরিবর্তনের কারণে বেতনের পরিমাণ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
সার্বিয়া বেতন কত এর্বং কোন কাজের চাহিদা বেশি
বর্তমান সময়ে সার্বিয়ায় বিভিন্ন খাতে ব্যাপকভাবে জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কারণ সার্বিয়া একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে নিয়মিত নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, অবকাঠামো ও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিতে দেশটিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
বর্তমানে সার্বিয়ায় যে খাতগুলোতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে, সেগুলো হলো—
- কনস্ট্রাকশন বা নির্মাণ খাত
- কলকারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান
- কৃষিকাজ
- চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা
- তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি)
যদিও সার্বিয়ায় আরও অনেক খাতে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে উপরে উল্লেখিত এই পাঁচটি সেক্টরে বর্তমানে কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আপনি যদি এসব কাজের যেকোনো একটিতে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন, তাহলে সারাবছর সার্বিয়ায় কাজ করার ভালো সুযোগ পেতে পারেন।
সার্বিয়া সর্বনিম্ন বেতন কত
আমাদের মধ্যে অনেকেই একেবারে নতুন অবস্থায়, কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই সার্বিয়া যেতে আগ্রহী হন। এ সময় সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি মাথায় আসে, তা হলো—অভিজ্ঞতা না থাকলে সার্বিয়াতে গেলে ন্যূনতম বেতন কত পাওয়া যায়? এই প্রশ্নটি প্রায় সবাই করে থাকেন।
সাধারণভাবে আমরা জানি, যদি কেউ অভিজ্ঞতা নিয়ে সার্বিয়া যান, তাহলে শুরু থেকেই তুলনামূলক ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া সম্ভব। তবে অনেকেই জানেন না যে, একেবারে নতুন ও অভিজ্ঞতাহীন কর্মীদের জন্যও সার্বিয়াতে বেতন মোটেও খারাপ নয়।
আসলে অভিজ্ঞতা ছাড়া সার্বিয়া গেলে শুরুতেই মাসিক ন্যূনতম বেতন বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৪ হাজার টাকার বেশি হয়ে থাকে। সার্বিয়াতে সাধারণত সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। তবে কাজের ধরন ও প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে অনেক সময় ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হতে পারে।
এক্ষেত্রে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত কাজ করলে তা ওভারটাইম হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর জন্য আলাদা ভাতা প্রদান করা হয়। ফলে মূল বেতনের পাশাপাশি অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ তৈরি হয়।
সব মিলিয়ে দেখা যায়, সার্বিয়াতে নতুন অবস্থায় কাজ শুরু করলেও মাস শেষে মোট বেতন ভালো অঙ্কের হয়ে থাকে, যা অনেকের জন্যই আর্থিকভাবে বেশ লাভজনক।
সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে
সার্বিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করার আগে সবার আগে যে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে, তা হলো—আপনি কোন উদ্দেশ্যে সার্বিয়া যেতে চান। কারণ বর্তমানে সার্বিয়াতে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসা পাওয়া যায়। আমরা সবাই জানি, বৈধ ভিসা ছাড়া সার্বিয়া সহ বিশ্বের কোনো দেশেই ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। তাই প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে, আপনি পড়াশোনা, ভ্রমণ নাকি কাজের উদ্দেশ্যে সার্বিয়া যাবেন।
যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে সার্বিয়া যেতে চান, তাহলে মোট খরচ সাধারণত প্রায় ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। অন্যদিকে, ভিজিট ভিসায় সার্বিয়া গেলে খরচ তুলনামূলক কম—প্রায় ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর যারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় সার্বিয়া যেতে চান, তাদের ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে, যা সাধারণত ৭ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
তবে আপনার পরিবারের কেউ বা নিকট আত্মীয় যদি ইতোমধ্যে সার্বিয়াতে বসবাস করে থাকেন, তাহলে তার রেফারেন্স ব্যবহার করে কম খরচে সার্বিয়া যাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে। পাশাপাশি বর্তমানে সরকারিভাবেও সার্বিয়া যাওয়ার কিছু প্রক্রিয়া চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে গেলে মোট ব্যয় অনেকটাই কমে আসে। মূলত আপনি কোন উপায়ে এবং কোন ভিসা ক্যাটাগরির মাধ্যমে সার্বিয়া যেতে চান—তার ওপরই সার্বিয়া যাওয়ার মোট খরচ নির্ভর করবে।
সার্বিয়া যেতে কত বয়স লাগে
সার্বিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে চাইলে আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে। একইভাবে, স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রেও ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হওয়া আবশ্যক। তবে টুরিস্ট ভিসায় সার্বিয়া ভ্রমণের জন্য ১৮ বছরের কম বয়সীদের যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, যদিও এই ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম ও সীমাবদ্ধতা প্রযোজ্য হতে পারে।
যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হয় এবং আপনি টুরিস্ট ভিসায় সার্বিয়া ভ্রমণ করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার অভিভাবকের লিখিত অনুমতিপত্র থাকতে হবে। তবে আপনি যদি বাবা-মার সাথে একসাথে সার্বিয়া যান, সে ক্ষেত্রে আলাদা কোনো অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হবে না।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকের এই লেখায় আমরা সার্বিয়াতে কাজের বেতন কত, কোন কোন পেশার চাহিদা বেশি এবং সার্বিয়া যেতে মোটামুটি কত টাকা খরচ হতে পারে—এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি সার্বিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন বা ভবিষ্যতে যাওয়ার আগ্রহ থাকে, তাহলে এই পোস্টে উল্লেখিত তথ্যগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারেন। আশা করছি, এতে করে সার্বিয়া সম্পর্কে আপনার একটি স্পষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ ধারণা তৈরি হবে।
আশা করি আমাদের এই লেখাটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে যদি আপনি সামান্য হলেও উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে আপনার বন্ধুদের সাথে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন। এছাড়াও এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত, প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
