More

    সিরিয়ায় ‌‘হস্তক্ষেপ’ না করতে ইসরাইলকে সতর্ক করলেন ট্রাম্প

    মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মন্তব্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের প্রতি সিরিয়ার সঙ্গে একটি ‘দৃঢ় ও প্রকৃত সংলাপ’ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তার এই আহ্বান এমন এক সময়ে এসেছে যখন সিরিয়া দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি কাটিয়ে নতুন করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন যে, সিরিয়া যেন একটি স্থিতিশীল ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে, তার অগ্রযাত্রায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটতে দেওয়া উচিত নয়। এই মন্তব্য আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

    মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বান ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই মন্তব্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর মাত্র কয়েক দিন আগেই সিরিয়ার অভ্যন্তরে ইসরাইল নতুন করে সামরিক হামলা ও অনুপ্রবেশ চালিয়েছিল। এই আগ্রাসনে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে অন্তত ১৩ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। সোমবার তার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প এই আহ্বান জানান, যা ইসরাইল-সিরিয়া সীমান্তে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে। এই সামরিক আগ্রাসন কেবল মানবিক সংকটই তৈরি করেনি, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিন্দার ঝড় তুলেছে, বিশেষ করে সিরিয়ার নবগঠিত সরকারের পক্ষ থেকে।

    সিরিয়ার কঠোর নিন্দা: ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা

    ইসরাইলের এই ধারাবাহিক আগ্রাসী আচরণকে সিরিয়ার নবগঠিত সরকার ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুস্পষ্টভাবে অভিযোগ করেছে যে, ইসরাইল বেইত জিন্ন এলাকায় ‘নৃশংস ও সুপরিকল্পিত গোলাবর্ষণ’ চালিয়েছে। মন্ত্রণালয় এটিকে পূর্ণ মাত্রার একটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিকতার চরম লঙ্ঘন। সিরিয়া সরকারের মতে, এই ধরনের হামলা কেবল তাদের সার্বভৌমত্বের প্রতিই আঘাত নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও একটি গুরুতর হুমকি।

    যুক্তরাষ্ট্রের সন্তুষ্টি ও নতুন সরকারের প্রতি আস্থা

    যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বিবৃতিতে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার সরাসরি উল্লেখ করেননি, তবে তিনি সিরিয়ার নতুন সরকারের কার্যক্রমের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এই সন্তুষ্টি ইঙ্গিত দেয় যে, ওয়াশিংটন দামেস্কের বর্তমান নেতৃত্বকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এবং তাদের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সদিচ্ছা রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের দখলদারিত্ব বিস্তারের ধারাবাহিকতায় এই ধরনের সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে, যা আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যে একটি জটিল প্রভাব ফেলছে।

    আহমেদ আল-শারার নেতৃত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন

    ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আল-শারা বহু বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটিতে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাস ও বিভেদ দূর করে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতিকে ট্রাম্প একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছেন, যা সিরিয়ার দীর্ঘদিনের অস্থিরতা থেকে উত্তরণের পথ প্রশস্ত করতে পারে এবং একটি সংহত জাতি গঠনে সহায়ক হবে।

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার উন্নতির অগ্রগতিতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, ওয়াশিংটন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যাতে সিরিয়ার সরকার তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে অবিচল থাকে এবং একটি সত্যিকারের সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে। মার্কিন প্রশাসন বিশ্বাস করে যে, এই নিরন্তর সমর্থন সিরিয়াকে আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here