পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরোভস্ক সম্পূর্ণরূপে দখলের চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে রাশিয়া। মস্কোর পক্ষ থেকে সম্প্রতি এই ঘোষণা এলেও, কিয়েভ দ্রুত এটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এটিকে চলমান শান্তি আলোচনাকে প্রভাবিত করার রুশ অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই পাল্টাপাল্টি দাবি যুদ্ধক্ষেত্রে একটি নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচারণার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
পোকরোভস্কের কৌশলগত গুরুত্ব ও রক্তক্ষয়ী লড়াই
পোকরোভস্ককে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে একটি অত্যাবশ্যকীয় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর প্রধান কারণ হলো, শহরটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার সংযোগস্থল, যা সামরিক অভিযান ও সরবরাহ লাইনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘকাল ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ শহর ও আঞ্চলিক যোগাযোগ কেন্দ্রে তীব্র ও রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলে আসছিল। পোকরোভস্কের দখল নিতে উভয় পক্ষের অগণিত সেনা হতাহত হয়েছেন। এই শহরটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ছিল মস্কো ও কিয়েভ উভয়ের জন্যই এক দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল সামরিক লক্ষ্য।
শান্তি আলোচনার প্রেক্ষাপটে মস্কোর দাবি
মস্কোর এই আকস্মিক দাবির সময়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় যখন মার্কিন ও ইউক্রেনীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যুদ্ধ বন্ধের কৌশল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন, তার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই রাশিয়া পোকরোভস্ক দখলের ঘোষণা দেয়। এই ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে এবং এটিকে শান্তি প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার একটি সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কিয়েভের দৃঢ় প্রত্যাখ্যান ও অপতথ্য ছড়ানোর অভিযোগ
রাশিয়ার সরাসরি দাবির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউক্রেনের অপতথ্য প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান আন্দ্রি কোভালেঙ্কো। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যেই আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে মস্কো এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে থাকবে। কোভালেঙ্কো আরও জোর দিয়ে বলেন যে, এসব দাবি কেবল যুদ্ধের আলোচনাকে প্রভাবিত করার জন্যই নয়, বরং পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যেও দ্বিধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রচার করা হচ্ছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এটিকে রাশিয়ার একটি সুপরিকল্পিত অপপ্রচার কৌশল হিসেবে দেখছে।
এদিকে, রাশিয়ার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই সোমবার সকালে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছিল যে, অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও তাদের সেনারা পোকরোভস্ক এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। তারা শত্রুবাহিনীকে সফলভাবে প্রতিহত করে চলেছে এবং কোনো অবস্থাতেই নিজেদের অবস্থান ছাড়েনি। এই বক্তব্য রাশিয়ার দাবির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং চলমান তথাকথিত তথ্যযুদ্ধের তীব্রতা প্রমাণ করে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সফর ও মস্কোর দেওয়া প্রমাণ
রাশিয়ার দাবির পেছনে তাদের নিজস্ব প্রমাণও তুলে ধরা হয়েছে। গত রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্মুখ সারির সৈন্যদের সাথে দেখা করতে যান। সেখানেই দেশটির চিফ অফ জেনারেল স্টাফ ভেলারি গেরাসিমোভ পুতিনকে পোকরোভস্ক দখলের সুসংবাদ দেন। পরবর্তীতে, রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাশিয়ান সেনারা পোকরোভস্কের সিটি সেন্টারে বিজয়োল্লাস সহকারে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করছে। এই ভিডিওটির সত্যতা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনও নিশ্চিত করেছে, যা মস্কোর দাবিকে আরও জোরালো করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, এই দখল তাদের পূর্বাঞ্চলীয় অগ্রগতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় আঘাত হানবে।
