দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ১০ হাজার ২১৯ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এই বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়াটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এই পদক্ষেপ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী ভিত রচনার ইঙ্গিত বহন করে। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি নিঃসন্দেহে দেশের শিক্ষা খাতে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে আসবে এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
প্রথম ধাপে ছয় বিভাগে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই বৃহৎ নিয়োগ কার্যক্রমটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রাথমিকভাবে, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ — এই ছয়টি বিভাগের অধীনস্থ শূন্য পদসমূহের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ দুটি বিভাগ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম, সংশ্লিষ্ট শূন্য পদগুলোর জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পরবর্তী ধাপে প্রকাশ করা হবে বলে অধিদপ্তর জানিয়েছে। এই ধাপে ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্দেশ্য হলো সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা এবং দেশের প্রতিটি অঞ্চলে শিক্ষকের চাহিদা পূরণ করা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান প্রধান জাতীয় পত্রিকাগুলোতে এই ১০ হাজার ২১৯টি শূন্য পদের বিপরীতে বিস্তারিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে।” এটি সম্ভাব্য আবেদনকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, কারণ এর মাধ্যমে তারা আবেদনের বিস্তারিত প্রক্রিয়া, যোগ্যতা ও শর্তাবলী সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবগত হতে পারবেন।
নিয়োগ বিধিমালায় সংশোধন ও কমিটির গঠন
সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি সুসংগঠিত আইনি কাঠামো এবং একটি শক্তিশালী কমিটি। চলতি বছরের ২৮ আগস্ট রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই বিধিমালাটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা নিয়োগ সংক্রান্ত সকল নীতিমালা ও নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে।
বিধিমালা জারির মাত্র তিন দিন পর, ৩১ আগস্ট, একটি আট সদস্যের ‘কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ কমিটি’ গঠিত হয়। এই কমিটি নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করার জন্য দায়বদ্ধ। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, এবং সদস্যসচিব হিসেবে রয়েছেন অধিদপ্তরের (পলিসি ও অপারেশন) পরিচালক। এছাড়াও, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এবং সরকারি কর্ম কমিশনের প্রতিনিধিরাও এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সহযোগিতা ও সমন্বয় নিশ্চিত করবে এবং একটি নিরপেক্ষ ও মানসম্মত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে।
তবে, এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব ঘটেছিল। সংশোধিত বিধিমালায় কিছু ত্রুটি বা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হওয়ায় তা সংশোধন করা আবশ্যক হয়ে পড়েছিল। সরকার দ্রুততার সাথে এই বিষয়টির প্রতি মনোনিবেশ করে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ফলস্বরূপ, ২ নভেম্বর তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ত্রুটিমুক্ত ও নতুনভাবে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ পুনরায় প্রকাশ করা হয়। এই সংশোধিত বিধিমালাটিই বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে।
এই বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়াটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করতে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। নতুন শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত উন্নত করবে এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রত্যাশা, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত ও সফলভাবে সম্পন্ন হবে, যার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা খাত আরও গতিশীল হয়ে উঠবে এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক অগ্রগতি সাধিত হবে।
