বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দীর্ঘদিনের পদোন্নতি জটিলতার অবসান ঘটিয়ে সরকার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ১ হাজার ৮৭০ জন প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা শিক্ষা প্রশাসনের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন জাতীয় বেতন স্কেলের ষষ্ঠ গ্রেড অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। এই গ্রেডের মূল বেতন শুরু হয় ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে এবং এর সর্বোচ্চ ধাপ ৬৭ হাজার ১০ টাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং কর্মজীবনের অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এই পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের পূর্বের কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশাসনিক পরিভাষায় এটি ‘ইনসিটু’ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ, তাদের পদোন্নতি হলেও কর্মস্থল বা দপ্তরে কোনো পরিবর্তন আসবে না। তারা নিজ নিজ কলেজ বা দপ্তরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবেই নিযুক্ত থাকবেন। এই ব্যবস্থা পদোন্নতি প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সহায়ক হবে।
দীর্ঘদিনের জট ও আন্দোলনের ফল
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা জটিলতা ছিল একটি প্রকট সমস্যা। বছরের পর বছর ধরে পদোন্নতি না হওয়ায় এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে, বিশেষ করে প্রভাষক পর্যায়ে, গভীর অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছিল। এই দীর্ঘসূত্রিতা তাদের কর্মস্পৃহা কমিয়ে দিচ্ছিল এবং পেশাগত জীবনে স্থবিরতা আনছিল।
পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে উঠেছিল যে, পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষকরা সম্প্রতি তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে বিভিন্ন আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই আন্দোলন শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চ মহলে বিষয়টি সুরাহার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অবশেষে, সরকারের এই বড় আকারের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত সেই আন্দোলনের ফলশ্রুতি এবং দীর্ঘদিনের বঞ্চনার একটি ইতিবাচক সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন যে, চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে প্রথম পদোন্নতি পাওয়ার কথা থাকলেও তাকে ৯ বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই উদাহরণটি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির ক্ষেত্রে পূর্বেকার দীর্ঘসূত্রিতা এবং কর্মকর্তাদের ধৈর্যের চরম পরীক্ষার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। এই পদোন্নতির মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষকের মুখে হাসি ফুটলো এবং তাদের মধ্যে নতুন করে কর্মোদ্দীপনা ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
