বাংলাদেশের সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের বহুল প্রতীক্ষিত ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি ও বিস্তারিত আসনবিন্যাস গত সোমবার রাতে প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এই ঘোষণার পরপরই, পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে আন্দোলনরত প্রার্থীদের একটি অংশ তাদের কর্মসূচিকে নতুন ধাপে নিয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আন্দোলনকারীরা যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চে’র ডাক দিয়েছেন, যা গতকাল সোমবার রাতেই নতুন কর্মসূচি হিসেবে ঘোষিত হয়। একদিকে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত প্রার্থীরা, অন্যদিকে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন – এই দুইয়ের দোলাচলে এখন ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীরা।
লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি এবং কেন্দ্রসমূহ
প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে এই পরীক্ষা একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ। সাধারণ ক্যাডারের আবশ্যিক বিষয়সমূহের পরীক্ষা চলবে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে। এরপর, কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের পদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর লিখিত পরীক্ষা ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে।
আবশ্যিক বিষয়গুলোর বিস্তারিত সময়সূচি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ২৭ নভেম্বর: বাংলা (০০১) প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
- ৩০ নভেম্বর: বাংলা (০০২) দ্বিতীয় পত্রের জন্য নির্ধারিত।
- ১ ডিসেম্বর: ইংরেজি (০০৩) বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
- ৩ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ বিষয়াবলি (০০৫) পরীক্ষার দিন।
- ৪ ডিসেম্বর: আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি (০০৭) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
- ৭ ডিসেম্বর: গাণিতিক যুক্তি (০০৮) এবং মানসিক দক্ষতা (০০৯) – এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা একযোগে নেওয়া হবে।
- ৮ ডিসেম্বর: সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (০১০) পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত।
- ১০ ডিসেম্বর থেকে: পদ-সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের পরীক্ষা শুরু হবে, যা পেশাগত এবং কারিগরি ক্যাডারের প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এবং নতুন কর্মসূচি
লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীদের একাংশ তারিখ পেছানোর দাবিতে সোচ্চার। তাদের অভিযোগ, প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি এবং পরীক্ষার তারিখ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এই দাবিতে তারা ইতোমধ্যে স্মারকলিপি প্রদান, মিছিল, অবরোধ ও অনশনসহ নানামুখী কর্মসূচি পালন করেছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত, নীলক্ষেত ও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে তারা তাদের দাবি তুলে ধরেছেন। এছাড়া, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কও সাময়িকভাবে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। আন্দোলনরত নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, নির্ধারিত তারিখ অপরিবর্তিত থাকলে তারা পরীক্ষা বর্জন করতে পারেন, যা এই বৃহৎ নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।
৪৫তম বিসিএস: একটি সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, ৪৭তম বিসিএসের প্রাথমিক ধাপ অর্থাৎ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের ২৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এই বিসিএসে সরকারি চাকরির জন্য মোট ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন, যা দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সরকারি চাকরির প্রতি গভীর আগ্রহের প্রতিফলন ঘটায়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর থেকেই প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তবে ঘোষিত সময়সূচি নিয়ে তাদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এই মুহূর্তে পিএসসি এবং আন্দোলনরত প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা না হলে, ৪৭তম বিসিএসের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। সকল প্রার্থীর জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরীক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করাই এই মুহুর্তে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
