More

    চাকরির সন্ধানে বিশ্বের ১২০ কোটি তরুণ: বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট

    আগামী ২৫ বছরে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১২০ কোটি তরুণ নতুন করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে, কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। এই গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা। তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি এখনই আমরা এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে মানব ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ব্যর্থতার দায়ভার আমাদের বহন করতে হবে। এই প্রজন্মকে আমরা সবচেয়ে বড় হতাশার মুখে ঠেলে দেবো।

    বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় মূল বার্তা

    ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভায় দেওয়া এক জোরালো ভাষণে অজয় বাঙ্গা বিশ্ব অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান কর্মসংকট এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে বিদ্যমান জটিল চ্যালেঞ্জগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। তার বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী তরুণ সমাজের ভবিষ্যৎ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গভীর আলোকপাত করা হয়।

    তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বর্তমানে ‘উন্নয়নশীল’ হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে বসবাস করবে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর যদি পর্যাপ্ত শিক্ষা, প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকে, তাহলে সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য আরও বাড়বে এবং এর ফলস্বরূপ চরম সামাজিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেবে। এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সংকট নয়, বরং মানবিক বিপর্যয়েরও কারণ হতে পারে।

    বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বার্তার তাৎপর্য

    বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের এই বার্তা বাংলাদেশের মতো জনবহুল উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশের রয়েছে এক বিশাল ও কর্মঠ তরুণ জনগোষ্ঠী, যাদেরকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে দেশের মূল শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। এই তরুণ শক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে পারবে। অন্যথায়, কর্মসংস্থানহীনতা দেশের সার্বিক অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।

    পাঁচটি মূল খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা

    অজয় বাঙ্গা কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পাঁচটি মূল খাতের ওপর জোর দিয়েছেন, যা আধুনিকায়ন ও সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এই খাতগুলো হলো:

    • অবকাঠামো ও জ্বালানি: আধুনিক ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হবে।
    • কৃষি ও কৃষি-ব্যবসা: কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ এবং কৃষি-ভিত্তিক শিল্প প্রসারের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে।
    • স্বাস্থ্যসেবা: উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এবং স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় জনবল তৈরিতে বিনিয়োগ আবশ্যক।
    • পর্যটন: পর্যটন শিল্পকে আরও আকর্ষণীয় ও আধুনিক করে তোলার মাধ্যমে এই খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব।
    • খনিজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ: খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো যেতে পারে।

    তিনি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন যে, এই খাতগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে হবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে, যাতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হন।

    নিজস্ব অর্থনৈতিক কাঠামো এবং বেসরকারি বিনিয়োগের গুরুত্ব

    অজয় বাঙ্গা আরও বলেন যে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কেবল বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভর না করে নিজেদের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও মজবুত করতে হবে। এর পাশাপাশি, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ভেতরে পুঁজি প্রবাহ বাড়লে তা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আনবে।

    ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান

    সবশেষে, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এক জরুরি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের অবশ্যই ঐক্য, সহানুভূতি ও দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ বিশ্বব্যাপী যে যৌথ চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তা মোকাবেলায় একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই কেবল আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল ও কর্মময় ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারব। এই মহতী লক্ষ্য অর্জনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here