More

    মেয়েকে নিয়ে কোন দুঃখের কথা জানালেন কাজল?

    বলিউডের ঝলমলে দুনিয়ায় পা না রেখেই যে বিপুল জনউন্মাদনা এবং নিরন্তর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা যায়, তার এক জীবন্ত উদাহরণ তৈরি করেছেন অভিনেতা অজয় দেবগন ও অভিনেত্রী কাজল দম্পতির কন্যা নিসা দেবগন। তারুণ্যের প্রারম্ভ থেকেই গণমাধ্যমের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা নিসার জীবন যেন এক খোলা বই। কিন্তু এই অদম্য কৌতূহল এবং অতিরিক্ত মনোযোগই নাকি তার ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তির মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমনটাই আক্ষেপ করে জানিয়েছেন মা কাজল। নিজের শৈশবের ছবি নিয়ে নিরন্তর কাটাছেঁড়া তার মনের গভীরে এক গভীর ছাপ ফেলে গেছে।

    জনজীবনের আলোয় নিসার প্রতিকূলতা

    কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, কী পরছেন কিংবা কী খাচ্ছেন – নিসা দেবগনের জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটিই যেন পাবলিক ডোমেইনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম, সর্বত্রই তাকে ঘিরে চলে অবিরাম চর্চা। এই লাগামহীন কৌতূহলই তার জীবনে এনে দিয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতা। নিরন্তর সমালোচনার কষাঘাত তার শৈশবের কোমল মনে স্থায়ী ক্ষত তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী কাজল। একজন তারকা সন্তান হিসেবে তার প্রতিটি পদক্ষেপই সমালোচনার তীক্ষ্ণ নজরে থাকে, যা স্বাভাবিক জীবনযাপনকে দুষ্কর করে তোলে।

    ক্যামেরার ঝলকানি এবং আত্ম-উপলব্ধির সংগ্রাম

    কিশোরী বয়স থেকেই ফটোসাংবাদিকদের অবিরাম অনুসরণ নিসার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়ির বাইরে পা রাখলেই ক্যামেরার ঝলকানি যেন তার নিত্যসঙ্গী। এই ছবিগুলো মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং নিসার নিজের চোখেই তা বারবার ধরা পড়ে। ধারাবাহিকভাবে নিজের তোলা ছবিগুলো নিরীক্ষণ করতে গিয়ে নিসা লক্ষ্য করেছেন, কীভাবে ক্যামেরার লেন্স এবং গণমাধ্যমের উপস্থাপনা তার ত্বকের রং থেকে শুরু করে নাকের আকার পর্যন্ত বদলে দিয়েছে। এই ধরনের অভিজ্ঞতা একজন তরুণীর আত্ম-উপলব্ধি এবং আত্মবিশ্বাসের ওপর এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে।

    কাজলের আক্ষেপ: শৈশবের কাটাছেঁড়া

    নিসার শৈশবে তোলা ছবিগুলো নিয়ে জনসমক্ষে যে নিরন্তর কাটাছেঁড়া হয়েছে, তা তার শিশুমনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এ বিষয়ে কাজল অত্যন্ত বেদনাভরা কণ্ঠে বলেন, “মানুষ ওর ছোটবেলার ছবি নিয়ে এতটাই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে, যা শুনে ও ভীষণ দুঃখ পেত।” সেই সময়ে নিসার চুলের ছাঁট কিংবা পোশাক নিয়েও নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করা হতো। কাজল আরও যোগ করেন, “কেন সে পোশাকশিল্পীর ডিজাইন করা পোশাক পরে না, কেনই বা সে সাধারণ পোশাকে ঘুরে বেড়ায় – এমন সব সমালোচনা ওর মনে মারাত্মক আঘাত হেনেছে।” একজন মা হিসেবে কাজলের এই উদ্বেগ অত্যন্ত স্বাভাবিক, যখন তার সন্তানের শৈশবকে ঘিরে এমন অপ্রয়োজনীয় আলোচনা হয়।

    অভিনয় থেকে দূরত্ব: নিজস্ব পথে চলার অঙ্গীকার

    এই সব তিক্ত অভিজ্ঞতা নিসার জীবনে এতটাই গভীর প্রভাব ফেলেছে যে, সে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সে আর যা-ই করুক না কেন, অভিনয়ে আসবে না। এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তার নিজের এবং কাজল জানিয়েছেন যে, মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তিনি কোনো জোরাজুরি করবেন না। তারকা সন্তান হলেও নিজের পছন্দ অনুযায়ী জীবন গড়ার স্বাধীনতা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। নিসা দেবগনের গল্প কেবল একজন তারকা সন্তানের নয়, বরং জনজীবনের আলোর নিচে থাকা যেকোনো মানুষের মানসিক সংগ্রাম এবং নিজস্ব পরিচিতি খুঁজে বের করার এক শক্তিশালী প্রতিচ্ছবি।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here