More

    ভ্রমণের জন্য টাকা জমানোর ১০ কৌশল

    ভ্রমণপিপাসু বাঙালির জন্য শীতকাল এক বিশেষ ঋতু। হিমেল হাওয়া আর উৎসবের আমেজে মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার জন্য। বিশেষত সন্তানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের এক অঘোষিত মৌসুম। যদিও আজকাল ভ্রমণের প্রবণতা বছরজুড়েই দেখা যায়, তবুও শীতের এই দুই মাসকে অনেকেই সপরিবারে ঘুরে বেড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বেছে নেন। তবে এই আনন্দময় অভিজ্ঞতা অর্জনের পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থনৈতিক সংস্থান

    ভ্রমণ মানেই খরচ। ব্যক্তিগত সামর্থ্য এবং আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এই খরচের বাজেট তৈরি হয়। অনেকে খরচ কমাতে ব্যাকপ্যাক ট্যুর বেছে নেন; নন-এসি বাসে যাতায়াত করেন, তুলনামূলক সস্তা আবাসন বা হোটেল পছন্দ করেন। আবার অনেকেই আছেন যারা আরাম-আয়েশে এবং বিলাসবহুলভাবে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। তবে দেখা যায়, ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া বা ক্রেডিট কার্ডের উপর নির্ভর করে ভ্রমণের খরচ মেটাতে গিয়ে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেন, যা দিন শেষে ভ্রমণের আনন্দকে ম্লান করে তোলে এবং আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি করে।

    কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনা এবং সঠিক কৌশলের মাধ্যমে এই আর্থিক চাপ এড়ানো সম্ভব। কীভাবে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের জন্য কার্যকরভাবে টাকা সঞ্চয় করা যায়, সেই বিষয়েই আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

    ১. আপনার ভ্রমণ বাজেট সুনির্দিষ্ট করুন

    যেকোনো সফল ভ্রমণের প্রথম ধাপ হলো একটি সুচিন্তিত বাজেট তৈরি করা। কোথায় যেতে চান, কতদিনের জন্য যেতে চান, সেখানে কী কী দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখবেন, কী ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান – এসব বিষয় প্রথমে সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক করে নিন। এরপর একটি বিস্তারিত খরচের তালিকা তৈরি করুন। এই তালিকায় যাতায়াত (বাস, ট্রেন, বিমানভাড়া), আবাসন (হোটেল, রিসোর্ট), খাবার, দর্শনীয় স্থানের প্রবেশ মূল্য, কেনাকাটা, এমনকি অপ্রত্যাশিত খরচ বাবদ কিছু অর্থও অন্তর্ভুক্ত করুন। লক্ষ্য যত পরিষ্কার থাকবে, সঞ্চয় করা তত সহজ হবে এবং আপনি আপনার অর্থ কোথায় খরচ করছেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। একটি সুস্পষ্ট বাজেট কেবল অর্থের পরিমাণই নির্ধারণ করে না, বরং এটি আপনাকে আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপও প্রদান করে।

    ২. প্রতি মাসে আলাদা করে টাকা জমানো শুরু করুন

    বেতন বা আয় পাওয়ার দিনই আপনার ভ্রমণ তহবিলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি ‘পে ইয়োরসেল্ফ ফার্স্ট’ বা ‘আগে নিজেকে অর্থ পরিশোধ করুন’ নীতির একটি চমৎকার উদাহরণ। মাসের শুরুতেই এই কাজটি করলে মাস শেষে অপ্রত্যাশিত খরচের কারণে ভ্রমণ তহবিলে টাকা জমাতে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি মাসে যদি আপনি মাত্র ২ হাজার বা ৪ হাজার টাকাও ভ্রমণ তহবিলে আলাদা করে রাখেন, তাহলে বছর শেষে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রূপান্তরিত হবে, যা আপনার কাঙ্ক্ষিত ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোই সময়ের সাথে সাথে বড় সাফল্যের দিকে পরিচালিত করে।

    ৩. একটি স্বতন্ত্র হিসাব খুলুন

    ভ্রমণের জন্য অর্থ সঞ্চয়কে আরও সুসংগঠিত এবং উৎসাহিত করতে একটি আলাদা ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খুলতে পারেন। আপনার মূল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে এই তহবিল আলাদা রাখলে খরচ করার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। যখন আপনার ভ্রমণ তহবিল আপনার দৈনন্দিন খরচের অ্যাকাউন্ট থেকে পৃথক থাকে, তখন এটি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক সঞ্চয় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এতে হাত দেওয়ার আগে আপনি দু’বার চিন্তা করবেন। এই মানসিক বিভাজন আপনাকে আপনার সঞ্চয়ের প্রতি আরও দায়বদ্ধ করে তোলে এবং ভ্রমণ তহবিলকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। আজকাল বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাও এই ধরনের আলাদা তহবিল ব্যবস্থাপনার সুযোগ দেয়, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করে তুলেছে।

    ৪. স্বয়ংক্রিয় সঞ্চয় চালু করুন

    আপনার বেতন বা আয়ের অর্থ আপনার মূল হিসাবে আসার সাথে সাথে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ভ্রমণ তহবিলের হিসাবে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করুন। এটি আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত কার্যকর বৈশিষ্ট্য। আপনি আপনার ব্যাংককে নির্দেশ দিতে পারেন প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখে আপনার মূল অ্যাকাউন্ট থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনার ভ্রমণ তহবিলের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করার জন্য। এই ‘সেট ইট অ্যান্ড ফরগেট ইট’ পদ্ধতি আপনাকে নিয়মিত সঞ্চয়ের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেবে এবং আপনি অজান্তেই একটি বড় তহবিল গড়ে তুলতে পারবেন। এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ সঞ্চয়ের একটি চমৎকার উপায়, যেখানে আপনাকে প্রতিবার ম্যানুয়ালি অর্থ স্থানান্তরের কথা মনে রাখতে হয় না, ফলে সঞ্চয় প্রক্রিয়াটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here