বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার প্রত্যক্ষ প্রভাব এবার বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারেও দৃশ্যমান। সম্প্রতি বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এক তাৎক্ষণিক ঘোষণায় দেশের বাজারে স্বর্ণের নতুন দর নির্ধারণ করেছে, যা ভোক্তাদের জন্য উল্লেখযোগ্য মূল্যবৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৬৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে নতুন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) ঘোষণা:
বাজুস কর্তৃক সর্বশেষ শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের নতুন দর কার্যকর করার কথা জানানো হয়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা। উল্লেখ্য, ১ নভেম্বর এই একই ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ২ লাখ ৯৬ টাকা। এই পরিবর্তিত মূল্য ২ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে এবং বুধবার (৬ নভেম্বর) পর্যন্ত এই দামেই স্বর্ণ বিক্রি হবে।
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণ
বাজুস তাদের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্যবৃদ্ধিই এই দাম পরিবর্তনের প্রধান কারণ। বিশ্বজুড়ে আর্থিক অনিশ্চয়তা, মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে স্বর্ণের চাহিদা বাড়ায় বিশ্ববাজারে এর দাম বেড়েছে। স্থানীয় জুয়েলারি শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সার্বিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই বাজুস এই নতুন মূল্য কাঠামো নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ক্যারেটভেদে নতুন মূল্য তালিকা
বাজুসের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বিভিন্ন ক্যারেটের স্বর্ণের প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রাম) মূল্য নিম্নরূপ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্বের দামের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি:
- ২২ ক্যারেট: প্রতি ভরি স্বর্ণের নতুন মূল্য ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা। ১ নভেম্বরের পূর্বে এর দাম ছিল ২ লাখ ৯৬ টাকা।
- ২১ ক্যারেট: প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে হবে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৯৬ টাকায়। এর পূর্ববর্তী মূল্য ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৮ টাকা।
- ১৮ ক্যারেট: প্রতি ভরির জন্য নতুন মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮১ টাকা। যা ১ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭১৬ টাকা।
- সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ: প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৮০ টাকা। এর পূর্বের মূল্য ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৪ টাকা।
অতিরিক্ত ভ্যাট ও মজুরি
স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সাথে ক্রেতাদের আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি (মেকিং চার্জ) যুক্ত হবে। তবে, গহনার নকশা এবং কারুকার্যের মানভেদে এই মজুরির তারতম্য হতে পারে বলে বাজুস জানিয়েছে। গ্রাহকদের স্বর্ণ ক্রয়ের সময় এই অতিরিক্ত খরচ সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই মূল্যবৃদ্ধি দেশের জুয়েলারি শিল্পে এবং স্বর্ণ ক্রেতাদের উপর তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক বাজারে স্বর্ণের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
