পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা-পরিচালক তার সন্তানদের মধ্যে বিশাল অঙ্কের শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ব্যবসার উত্তরসূরি তৈরির এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই পদক্ষেপ কেবল পারিবারিক ব্যবসার ধারাবাহিকতাই নয়, বরং দ্বিতীয় প্রজন্মকে কর্পোরেট জগতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার একটি সুচিন্তিত কৌশল হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
ক্রাউন সিমেন্টের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, উদ্যোক্তা-পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল তার দুই সন্তানকে ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা সমমূল্যের শেয়ার উপহার দিয়েছেন। তিনি তার ছেলে সায়হাম সাদিক পিয়াল এবং মেয়ে শোভা সোহাকে ২০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ শেয়ার হস্তান্তর করেছেন। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর মাধ্যমে সোমবার এই হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ঢাকার বাজারে সোমবার ক্রাউন সিমেন্টের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫১ টাকা, সেই হিসেবে এই ৪০ লাখ শেয়ারের মোট বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য কর্পোরেট উপহার।
উত্তরসূরি তৈরির সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা
এই গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার হস্তান্তরের নেপথ্যে রয়েছে সুদূরপ্রসারী ব্যবসায়িক পরিকল্পনা। আলমাস শিমুল প্রথম আলোকে এই পদক্ষেপের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমরা ব্যবসায় সক্রিয় থাকতে থাকতেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ব্যবসার উত্তরাধিকার হিসেবে যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে চাই। এ কারণেই তাদের মধ্যে শেয়ারের ন্যূনতম মালিকানা হস্তান্তরের পাশাপাশি ব্যবসায়ও যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা দেশ ও কোম্পানির জন্য এখন থেকেই যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন।” তিনি আরও যোগ করেন, তাদের ব্যবসার পরিধি এখন অনেক বড় হয়েছে, ফলে তারা সন্তানদের ওপর কিছু দায়িত্ব দিয়ে নতুন নতুন ব্যবসাকে আরও এগিয়ে নিতে এবং নিজেদের মনোযোগ আরও গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয়ে নিবদ্ধ করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি কেবল একটি শেয়ার হস্তান্তর নয়, বরং বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসায়িক কাঠামোতে দ্বিতীয় প্রজন্মকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করার একটি কৌশলগত বিনিয়োগ। এই ধরনের পদক্ষেপ একদিকে যেমন কোম্পানির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে, তেমনই অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মালিকানার অনুভূতি এবং দায়বদ্ধতা তৈরি করে, যা তাদের ব্যবসার প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে।
এই শেয়ার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট মহলে এই ঘটনাটি ক্রাউন সিমেন্টের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা এবং টেকসই কর্পোরেট গভর্নেন্সের একটি ইঙ্গিতবাহী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি অন্যান্য পারিবারিক ব্যবসাকেও দ্বিতীয় প্রজন্মকে সফলভাবে ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
