বছর যখন সমাপ্তির পথে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠছে, ঠিক তখনই আবারও আসছে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির দুঃসংবাদ। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সম্প্রতি প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৯ টাকা ২৭ পয়সা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ পেশ করেছে, যা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ ও প্রেক্ষাপট
বিটিটিসি গত সোমবার (১০ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবনার কারণ ব্যাখ্যা করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের গড় এলসি মূল্য (Letter of Credit value), অভ্যন্তরীণ ইনবন্ড ও এক্সবন্ড খরচ এবং বিশেষত মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই বর্ধিত ব্যয়ভার সমন্বয় করতেই মূল্যবৃদ্ধির সুপারিশ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলে কমিশন উল্লেখ করেছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত এক মূল্য সমন্বয় সভায় ৩ আগস্ট থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা দরে বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরপরই বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্য অস্থিরতা এবং দেশের অভ্যন্তরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান হ্রাস পাওয়ায় আমদানি খরচ পুনরায় বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতি দেশের বাজারে নতুন করে তেলের দাম সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে।
আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব এবং নতুন প্রস্তাবনা
নভেম্বরের শুরুতেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। এই সময় প্রতি টন সয়াবিন তেলের মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৬২ ডলার এবং পাম তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৩৭ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারের এই অস্থিরতা সরাসরি দেশের বাজারে আমদানি মূল্যের ওপর প্রভাব ফেলে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
বিটিটিসির প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১২২ টাকা ৬০ পয়সা ধরে এই নতুন মূল্য হিসাব করা হয়েছে। এর ফলে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লিটারপ্রতি ১৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা ২৭ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সাথে, খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে লিটারপ্রতি ১৭৭ টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে ভোক্তাদের মাসিক ব্যয়ের উপর আরও চাপ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা ও ভোক্তা অসন্তোষ
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে দেশে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই তথ্য দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতাকেই নির্দেশ করে। ধারাবাহিক এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়কে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে এবং ভোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছেন সাধারণ মানুষ।
