More

    ১৮৫ পোশাক কারখানা বন্ধ, হাজারও শ্রমিক বেকার

    বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক শিল্প একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস এবং লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটি এক গভীর সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, যা উদ্বেগজনক হারে শিল্পটির ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে। গত এক বছরে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প থেকে ১৮৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলস্বরূপ অগণিত শ্রমিকের কর্মসংস্থান কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং হাজার হাজার পরিবারের জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা।

    উৎপাদন ব্যাহতকারী প্রধান কারণসমূহ ও এর প্রভাব

    কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র সংকটকে। জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা একদিকে যেমন সময় মতো পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাধা দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে উৎপাদন খরচও বাড়িয়ে তুলছে। এই সংকটের সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশের রপ্তানি খাতে। গত দুই মাসে রপ্তানি প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ কমেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশের অন্যতম প্রধান উৎসের জন্য এক অশনি সংকেত।

    এই গুরুতর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ) টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবং এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একটি সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জোর আহ্বান জানিয়েছে।

    বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ও আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের ঘাটতি

    রোববার (১২ অক্টোবর) নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিজিবিএ জানায়, ক্রমাগত কারখানা বন্ধ হওয়া এবং উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা কমছে এবং তাদের আগ্রহ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের ভবিষ্যৎ রপ্তানি সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

    ব্রিফিংয়ে আরও উল্লেখ করা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত আন্তর্জাতিক পোশাক মেলাগুলোতে বাংলাদেশের সক্রিয় ও পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয়। যদিও কিছু শিল্প উদ্যোক্তা সীমিত পরিসরে অংশ নিচ্ছেন, তবে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রায়শই উপেক্ষিত থাকছে। এর ফলে নতুন বাজার অন্বেষণ, ব্র‍্যান্ডিং এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে, যা দেশের রপ্তানি খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।

    বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তা

    অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চলমান নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে উৎপাদক ও বায়িং হাউসগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় এখন সময়ের দাবি। তারা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উচ্চ শুল্ক আরোপ এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ, পণ্যের চাহিদা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়েনি, যা শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।

    ক্রেতাদের সতর্কতা ও সরকারের অপরিহার্য ভূমিকা

    অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, যদি দেশের শিল্প খাত দ্রুত উৎপাদন সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে নতুন ক্রয়াদেশ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এই সতর্কবার্তা দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। শিল্প উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে এবং এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারের কার্যকর ভূমিকা এখন অনস্বীকার্য। একটি সমন্বিত নীতি ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, এই শিল্প আরও গভীর সংকটে নিপতিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

    সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংগঠনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিজিবিএর সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন পাভেল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ পিন্টু, ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুর রহমান ফরহাদ এবং মহাসচিব জাকির হোসেন সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ। তাদের বক্তব্যে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান দুরবস্থা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here