More

    প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি

    বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হলো। আজ দুপুরেই পানামার পতাকাবাহী একটি বৃহৎ জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে, যা এই যুগান্তকারী বাণিজ্যিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। সরকারের-থেকে-সরকার (জিটুজি) পদ্ধতির আওতায় এই আমদানি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, যা দীর্ঘদিনের আমদানির উৎসসমূহে একটি উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    ঐতিহাসিক এই প্রথম চালানে রয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার মেট্রিক টন (নির্দিষ্টভাবে ৫৬,৯৫০ মে. টন) গম। ‘এমভি নর্স স্ট্রাইড’ নামের পানামীয় পতাকাবাহী জাহাজটি আজ দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করবে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। এই চালানটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বর্ধিত অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি দৃঢ় প্রমাণ।

    উচ্চপর্যায়ের তদারকি: স্বচ্ছতা ও গুণগত মান নিশ্চিতকরণ

    এই গুরুত্বপূর্ণ আমদানি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে অবস্থান করছে। অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) এএইচএম কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত এই বিশেষ টিম গমের নমুনা সংগ্রহ, খালাস প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, আজই জাহাজ থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী গমের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে, যাতে গুণগত মান সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না থাকে।

    ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি

    দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ মূলত রাশিয়া, ইউক্রেন, ভারত এবং ব্রাজিল, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও উরুগুয়ের মতো দেশগুলো থেকে গম আমদানি করে আসছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবধান কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন উৎস থেকে গম আমদানির এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। এটি দেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনতেও সহায়ক হবে।

    এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি টন ৩০২ ডলার দরে মোট ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে ১০ শতাংশ কমবেশি শর্ত থাকায়, মোট আমদানিকৃত গমের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে ৫৬,৯৫০ মেট্রিক টনের প্রথম চালানটি নিয়ে ‘এমভি নর্স স্ট্রাইড’ আজ বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। অবশিষ্ট প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন গম আগামী সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে একাধিক চালানে দেশে এসে পৌঁছাবে, যা ‘ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েটস’ এর মাধ্যমে জিটুজি পদ্ধতিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই ধারাবাহিক সরবরাহ দেশের খাদ্য মজুতকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here