More

    ব্যাংকে কত টাকা রাখলে কাটা হবে আবগারি শুল্ক

    ব্যাংকিং খাতে প্রতিনিয়ত আসা পরিবর্তনগুলো সরাসরি লাখ লাখ গ্রাহকের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করে। সম্প্রতি, ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্কের কাঠামোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন আনা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিলেও এর বিস্তারিত প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেরই এখনো স্পষ্ট ধারণা নেই। এই পরিবর্তনটি ছোট সঞ্চয়কারীদের উপর থেকে আর্থিক চাপ কমানোর লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে এবং আবগারি শুল্ক প্রদানের শর্তাবলী নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে।

    পরিবর্তিত আবগারি শুল্কের নিয়মাবলী: সাধারণ গ্রাহকদের জন্য স্বস্তির বার্তা

    আর্থিক বছরের বাজেট ঘোষণার সময় এই যুগান্তকারী পরিবর্তনটি আনা হয়। পূর্ববর্তী নিয়মে, ব্যাংক হিসাবে মাত্র এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলেই আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হতো। কিন্তু নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখন এই সীমা তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন শুধুমাত্র যাদের ব্যাংক হিসাবে তিন লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকবে, তাদেরকেই আবগারি শুল্ক প্রদান করতে হবে। এই পদক্ষেপটি দেশের বৃহত্তর সংখ্যক ক্ষুদ্র ও মাঝারি আমানতকারীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্বস্তি এনে দিয়েছে, যা তাদের সঞ্চয়ে আরও উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    যদিও এই পরিবর্তনটি গত জুনে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় কার্যকর করা হয়, এর প্রভাব গ্রাহকরা সাধারণত বছরের শেষ দিকে অনুভব করেন। প্রতি বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের মুঠোফোনে টাকা কেটে নেওয়ার ক্ষুদে বার্তা পাঠায়। এই বার্তাগুলো প্রায়শই গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে, কারণ অনেকে এ ধরনের শুল্ক কাটার কারণ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত থাকেন না। এই প্রেক্ষাপটে, আবগারি শুল্কের বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং এর নতুন প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

    আবগারি শুল্ক কী? একটি বিস্তারিত পর্যালোচনা

    আবগারি শুল্ক (Excise Duty) হলো এক প্রকারের পরোক্ষ কর, যা সরকার নির্দিষ্ট কিছু পণ্য, সেবা অথবা আর্থিক কার্যক্রমের উপর ধার্য করে। এটি সরাসরি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয় অথবা মুনাফার উপর আরোপ করা হয় না; বরং কোনো নির্দিষ্ট কার্যকলাপ যেমন – ব্যাংকে টাকা রাখা, মুঠোফোনে কথা বলা, সিগারেট বা নির্দিষ্ট কিছু বিলাসবহুল পণ্য ক্রয়, এমনকি কিছু বিশেষ পরিষেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই শুল্ক প্রযোজ্য হয়। সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে এই শুল্ক কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার উপর কর আরোপ করা, যা পরোক্ষভাবে ভোক্তাদের দ্বারা পরিশোধিত হয়।

    কোন পরিস্থিতিতে আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হবে?

    নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে বছরে একবার হলেও যদি তিন লাখ টাকা বা তার বেশি স্থিতি থাকে, তবে তার উপর আবগারি শুল্ক আরোপিত হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এই শুল্ক কেবলমাত্র হিসাবের সর্বোচ্চ স্থিতির উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, অর্থাৎ বছরের যেকোনো সময় যদি আপনার হিসাবে এই পরিমাণ টাকা জমা হয়ে থাকে, তবে আপনি এই শুল্কের আওতায় আসবেন। উদাহরণস্বরূপ, বছরের নির্দিষ্ট কোনো মাসে যদি আপনার হিসাবে ৩ লাখ টাকা অতিক্রম করে, তবে তা বছরের জন্য আবগারি শুল্কের জন্য বিবেচিত হবে, যদিও বাকি সময় আপনার হিসাবে কম টাকা থাকে।

    কত টাকা থাকলে কত শুল্ক: নতুন হার তালিকা

    ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত অর্থের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে আবগারি শুল্কের হার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সরকার নির্ধারিত এই হারগুলো একটি প্রগতিশীল কাঠামো অনুসরণ করে, যেখানে অর্থের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে শুল্কের পরিমাণও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। নিচে নতুন আবগারি শুল্কের হার বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:

    • আপনার হিসাবে যদি বছরের যে কোনো সময় তিন লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতি থাকে, তবে কোনো আবগারি শুল্ক কাটা হবে না
    • ৩ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ক্ষেত্রে, শুল্কের পরিমাণ ১৫০ টাকা
    • ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির জন্য, শুল্ক ৫০০ টাকা
    • ১০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত স্থিতির ক্ষেত্রে, শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার টাকা
    • ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির জন্য, আপনাকে ৫ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে।
    • ১ কোটি ১ টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত স্থিতির জন্য শুল্ক ১০ হাজার টাকা
    • ২ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে, এই শুল্কের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা
    • এবং যদি আপনার হিসাবে ৫ কোটি টাকার বেশি স্থিতি থাকে, তবে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক প্রযোজ্য হবে।

    আবগারি শুল্ক কীভাবে কাটা হয়?

    ব্যাংকগুলো সাধারণত প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে গ্রাহকের হিসাবে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ স্থিতির উপর ভিত্তি করে এই শুল্ক ধার্য করে। অর্থাৎ, যদি বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনেও আপনার ব্যাংক হিসাবে তিন লাখ টাকার বেশি জমা থাকে, তবে আপনার হিসাবটি আবগারি শুল্কের আওতাভুক্ত হবে। এই শুল্ক সাধারণত বছরের শেষ দিকে বা পরবর্তী বছরের শুরুতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয় এবং পূর্বে উল্লিখিত ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে গ্রাহকদের অবহিত করা হয়। এই নতুন নিয়মাবলি ব্যাংক গ্রাহকদের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় আরও বিচক্ষণতা আনতে সহায়তা করবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here