More

    বিক্রি বেড়েছে টয়োটার ‘করোলা ক্রস’ গাড়ির, কেন এত আগ্রহ

    বাংলাদেশের সড়কপথে জাপানি অটোমোবাইল জায়ান্ট টয়োটার একচ্ছত্র আধিপত্য এক সুপরিচিত চিত্র। এর মূল কারণ, এই ব্র্যান্ডের গাড়ির দীর্ঘস্থায়িত্ব, সহজলভ্য যন্ত্রাংশ এবং তুলনামূলক কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, যা এটিকে সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক করে তুলেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের গাড়ির বাজারে এক নতুন প্রবণতা লক্ষণীয়। ঐতিহ্যবাহী সেডান গাড়ির পাশাপাশি এখন নজর কাড়ছে টয়োটার এসইউভি (Sport Utility Vehicle) শ্রেণির ‘করোলা ক্রস’ মডেল। এর হাইব্রিড ইঞ্জিন প্রযুক্তির কারণে জ্বালানি সাশ্রয়ের অভূতপূর্ব সুবিধা, এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ। ফলে এর বিক্রি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গাড়ির বাজারকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে।

    দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের কাছে টয়োটার ‘এলিয়ন’ এবং ‘প্রিমিও’ মডেলের সেডান গাড়ি ছিল আভিজাত্য ও নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক। এই মডেলগুলোর প্রতি ভোক্তাদের এক বিশেষ দুর্বলতা ছিল। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে: জাপানে ২০২১ সালের পর এই দুটি জনপ্রিয় মডেলের উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, বাজারে এই মডেলগুলোর নতুন আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, যদিও এদের প্রতি চাহিদা এখনো প্রবল। এই পরিস্থিতির ফলে, যেখানে একটি ব্যবহৃত প্রিমিও গাড়ি কিনতে বর্তমানে ৪৫ থেকে ৪৮ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে, সেখানে নতুন একটি হাইব্রিড করোলা ক্রস এসইউভি এর চেয়েও কম দামে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসইউভি গাড়িগুলো তাদের মজবুত গঠন এবং জিপের মতো দেখতে হওয়ায়, এটি ক্রেতাদের মধ্যে এক নতুন আগ্রহ তৈরি করেছে।

    জ্বালানি সাশ্রয়ে অনবদ্য: হাইব্রিড প্রযুক্তির সুবিধা

    এসইউভি গাড়ি কেবল একটি বাহন নয়, এটি অনেকের কাছে স্বপ্ন ও আভিজাত্যের প্রতীক। এর উচ্চ গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, মজবুত কাঠামো এবং শক্তিশালী উপস্থিতি বহু ক্রেতাকে আকর্ষণ করে। তবে সাধারণত, এসইউভি গাড়ির উচ্চ মূল্য অনেক সময় আকাঙ্ক্ষিত ক্রেতাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। টয়োটার করোলা ক্রস এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্য এবং টয়োটার চিরাচরিত নির্ভরযোগ্যতার কারণে এই মডেলের চাহিদা দ্রুত গতিতে বাড়ছে।

    যারা করোলা ক্রস ব্যবহার করছেন, তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এর হাইব্রিড প্রযুক্তির কারণেই এর জ্বালানি খরচ অবিশ্বাস্য রকম কম, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, করোলা ক্রস মহাসড়কে প্রতি লিটার জ্বালানিতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত অনায়াসে চলতে সক্ষম, যা সত্যিই চমকপ্রদ। শহরের যানজটপূর্ণ সড়কেও এর মাইলেজ প্রায় ১৭ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকে, যা শহুরে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। জ্বালানি তেলের মূল্য যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন এই ধরনের সাশ্রয়ী গাড়ি নিঃসন্দেহে ক্রেতাদের জন্য একটি আশীর্বাদ।

    ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: কম খরচে দূরপাল্লার ভ্রমণ

    রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী সোহেল রানা, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪৪ লাখ টাকা খরচ করে একটি টয়োটা করোলা ক্রস গাড়ি কিনেছেন। এর আগে তিনি টয়োটার ‘এক্স করোলা’ মডেলের গাড়ি ব্যবহার করতেন। পুরোনো গাড়ি বদলে নতুন হাইব্রিড এসইউভি কেনার পেছনে তার নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ রয়েছে।

    সোহেল রানা প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই গাড়িতে ৩৬ লিটারের একটি ফুয়েল ট্যাংক রয়েছে, যা একবার সম্পূর্ণ ভর্তি করলে আমি অনায়াসে এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত চালাতে পারি। এটি আমাকে দূরপাল্লার ভ্রমণে জ্বালানি রিফিল করার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমার আগের গাড়ির তুলনায় করোলা ক্রস-এর ভেতরের জায়গা অনেক বেশি প্রশস্ত। বিশেষ করে, পেছনের সিটে বসার জায়গা এবং লেগ রুম যথেষ্ট আরামদায়ক, যা দীর্ঘ যাত্রায় পরিবারের সদস্যদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে। ঢাকার বাইরে দূরপাল্লার ভ্রমণে এই গাড়ির আরামদায়ক সিট এবং বিশাল বুট স্পেস এটিকে আদর্শ করে তুলেছে। বিশেষ করে, পারিবারিক ভ্রমণে এটি বাড়তি স্বস্তি দেয় এবং লাগেজ বহনে কোনো সমস্যা হয় না।”

    টয়োটার করোলা ক্রস মডেলটি শুধু জ্বালানি সাশ্রয়ই করছে না, বরং একটি আরামদায়ক এবং নির্ভরযোগ্য ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবেও এর চাহিদা বেড়েই চলেছে, যা দেশের গাড়ির বাজারে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here