দেশের বীমা খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা একটি পুরোনো সমস্যা। তবে এই আস্থাহীনতা কাটিয়ে উঠে খাতটিকে গ্রাহকবান্ধব ও সুসংগঠিত করতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন অপরিহার্য – এমনটাই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। তাদের মতে, যখন বীমা কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে তাদের পলিসির বিভিন্ন তথ্য জমা দেয়, তখন প্রায়শই দেখা যায় যে সেগুলোর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারে আপলোড করা তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতি বা গরমিল রয়েছে। যদি বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হয়, তবে এই ধরনের গরমিল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই থাকবে না, যা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের আস্থা বহুলাংশে বাড়িয়ে তুলবে।
বীমা খাতের আধুনিকায়নে প্রযুক্তির ব্যবহার: এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা
এই প্রেক্ষাপটে, বীমা খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরাম (আইআরএফ) একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাদের উদ্যোগে গত বুধবার সাভারের শক্তি ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে ‘বীমা খাতের আধুনিকায়নে প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক একটি দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মশালায় বীমা খাতের বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে সেগুলোর উত্তরণের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
কর্মশালার প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক সিইও, সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব এস এম জিয়াউল হক। তার অভিজ্ঞতাপূর্ণ আলোচনা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এছাড়াও, দুয়ার সার্ভিসেস পিএলসির পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির আধুনিক প্রযুক্তিগত সমাধান নিয়ে আলোকপাত করেন শাহনেওয়াজ দুর্জয়। কর্মশালায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসানও উপস্থিত ছিলেন, যিনি এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং সাংবাদিকদের ভূমিকা তুলে ধরেন।
ব্যাংকিং খাতের সাথে বীমার পার্থক্য: প্রযুক্তির প্রভাব
কর্মশালায় উপস্থিত বক্তারা ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে বীমা খাতের তুলনামূলক আলোচনা তুলে ধরেন। তারা বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাত প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত। এর ফলস্বরূপ, কোনো ব্যাংক যদি কোনো ধরনের অনিয়ম করে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তা তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, বীমা খাত এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। এর ফলে, বীমা কোম্পানিগুলো যখন গ্রাহকের প্রাপ্য পরিশোধে অনীহা দেখায় বা কোনো ধরনের অনিয়ম করে, তখন কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না, যা গ্রাহকদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তোলে এবং আস্থাহীনতা তৈরি করে।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন যে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রযুক্তিগতভাবে কোম্পানিগুলোকে একটি সুসংবদ্ধ কাঠামোর অধীনে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছু বীমা কোম্পানির অসহযোগিতা এবং প্রযুক্তি গ্রহণে অনীহার কারণে এই মহৎ উদ্যোগের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কোম্পানিগুলোর সদিচ্ছা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দৃঢ় পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি বলে তারা জোর দেন।
প্রযুক্তির ব্যবহার: গ্রাহকের আস্থা ও খাতের শৃঙ্খলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, বীমা খাতকে যদি পুরোপুরি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত করা সম্ভব হয়, তবে এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রাহক যখন প্রিমিয়াম জমা দেবেন, তখন তার সেই তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে আপডেট হবে এবং তিনি তার বীমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য পাবেন। এতে একদিকে যেমন বীমার প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে, অন্যদিকে এই খাতে একটি নতুন শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। প্রযুক্তিগত স্বচ্ছতা ও দ্রুত সেবা প্রদানের মাধ্যমে বীমা খাত দেশের অর্থনীতিতে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে। কর্মশালায় দুয়ার সার্ভিসেসের পক্ষ থেকে আধুনিক প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কীভাবে এই খাতকে আরও গতিশীল ও স্বচ্ছ করা যায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়।
