More

    ৩০০ কোটি টাকায় গুলশানে জমি কিনবে এমটিবি

    দেশের আর্থিক খাতে অন্যতম স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) পিএলসি, তাদের নিজস্ব কর্পোরেট সদর দপ্তর নির্মাণের লক্ষ্যে একটি সুদূরপ্রসারী এবং কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় ঢাকার অন্যতম অভিজাত ও ব্যবসায়িক কেন্দ্রস্থল গুলশানে একটি সুবিশাল জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এমটিবি তাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি এবং কার্যক্রম সম্প্রসারণের পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে।

    গুলশানে নিজস্ব জমি ক্রয়: একটি কৌশলগত বিনিয়োগ

    এমটিবির পরিচালনা পর্ষদ প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলশানে ১ বিঘা বা ২০ কাঠা জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকটি জানিয়েছে, এই মূল্যবান জমিটি ঢাকার গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১১৩ নম্বর সড়কের ১১০ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত। এটি কেবল একটি ভূমি ক্রয় নয়, বরং এটি ব্যাংকটির নিজস্ব পরিচয়ে একটি স্থায়ী ও আধুনিক কর্পোরেট হেডকোয়ার্টার প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করবে। এই বিনিয়োগ ভবিষ্যতের কর্মপরিবেশ উন্নতকরণ, ব্র্যান্ড ইমেজ সুদৃঢ়করণ এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। গুলশানের মতো একটি কৌশলগত স্থানে নিজস্ব ভবনের মালিকানা ব্যাংকটির কার্যক্রমে অধিকতর স্থিতিশীলতা ও দৃশ্যমানতা আনবে।

    পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত বাতিল: এক দূরদর্শী পর্যালোচনা

    উল্লেখ্য, এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ প্রধান কার্যালয়ের জন্য গুলশানে অবস্থিত একটি ২১ তলা ভবনের নিচতলা থেকে ১৪ তলা পর্যন্ত মোট ১৫টি ফ্লোর কিনে নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। সেই সময় নিবন্ধন ফি ও ভ্যাট ব্যতীত আনুমানিক ৪৫০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছিল, যেখানে প্রতিটি ফ্লোরের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় অনুমিত হয়েছিল। তবে, গতকাল বুধবারের পর্ষদ সভায় গভীর পর্যালোচনা ও দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনার বিচার-বিশ্লেষণের পর এই পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। পর্ষদ এখন ফ্ল্যাট বা ফ্লোর কেনার পরিবর্তে নিজস্ব জমি কিনে সম্পূর্ণ নিজেদের নকশায় একটি ভবন নির্মাণের কৌশলকেই অধিকতর উপযোগী ও লাভজনক বলে মনে করছে। নিজস্ব জমি থাকার ফলে ব্যাংকটি তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ভবনের ডিজাইন, সুযোগ-সুবিধা এবং ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে, যা ফ্লোর কিনে পাওয়া সম্ভব ছিল না। এই পরিবর্তন ব্যাংকটির দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের ইঙ্গিত দেয়।

    নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

    জমি কেনার এই সিদ্ধান্তটি অবশ্য সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। একবার অনুমোদন পেলে, এমটিবি তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দ্রুত অগ্রসর হবে এবং এই জমিতে তাদের নিজস্ব, অত্যাধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব কর্পোরেট কার্যালয় নির্মাণ করবে। এই নতুন ভবন ব্যাংকটির কর্মপরিবেশকে আরও উন্নত করবে, গ্রাহক সেবা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং তাদের কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলানে সক্ষম হবে। এটি এমটিবির কর্পোরেট পরিচয়ে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং তাদের শক্তিশালী অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে। একটি সুপরিকল্পিত নিজস্ব ভবন ব্যাংকটির কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনেও সহায়তা করবে।

    শেয়ারহোল্ডারদের অবহিতকরণ ও আর্থিক সক্ষমতা

    শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক গতকালের পর্ষদ সভায় নেওয়া এসব যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কথা আজ বৃহস্পতিবার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তার সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করেছে। এই স্বচ্ছতা ব্যাংকটির কর্পোরেট সুশাসন ও দায়বদ্ধতার পরিচায়ক। একই পর্ষদ সভায়, ব্যাংকটির চলতি বছরের প্রথম নয় মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদনও চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ব্যাংকটি উল্লেখযোগ্যভাবে ২০৯ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এই মুনাফা ব্যাংকটির সুদৃঢ় আর্থিক ভিত্তি এবং ভবিষ্যতের বড় বিনিয়োগ পরিচালনার সক্ষমতাকেই প্রতিফলিত করে, যা গুলশানে জমি ক্রয়ের মতো বৃহৎ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই কৌশলগত পদক্ষেপ এমটিবিকে আগামী দিনের ব্যাংকিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং বাজারে নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে প্রস্তুত করবে, যা তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্যও একটি ইতিবাচক সংকেত বহন করে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here