More

    চীনের পণ্যে শুল্ক কমালেন ট্রাম্প, ৫৭ থেকে ৪৭%

    বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্কের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস করার ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনার পারদ নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের হার ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

    গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা

    দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনার পরই এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই বৈঠক সম্পন্ন হয় এবং এর পরপরই শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা আসে। ইকোনমিক টাইমস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে এই খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

    এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বর্তমানে একটি এক বছরের বাণিজ্য চুক্তি বিদ্যমান, যা নিয়মিতভাবে নবায়ন করা হবে। ট্রাম্প দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, “আমাদের চুক্তি হয়েছে,” যা উভয় দেশের মধ্যে একটি স্থিতিশীল বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গীকারের ইঙ্গিত দেয়।

    শর্তাবলী এবং দ্বিপাক্ষিক প্রতিশ্রুতি

    তবে এই ইতিবাচক পদক্ষেপের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেইজিংয়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্তারোপ করেছেন। এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে:

    • আমেরিকান সয়াবিন ক্রয় পুনরায় শুরু: চীনকে আবার আমেরিকান সয়াবিন কেনা শুরু করতে হবে, যা মার্কিন কৃষকদের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর।
    • বিরল ধাতু রপ্তানি অব্যাহত রাখা: বিরল ধাতু রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হবে, যা উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নির্দেশ করে।
    • ফেন্টানিলের অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ: ফেন্টানিলের অবৈধ বাণিজ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যা জনস্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একটি প্রধান উদ্বেগ।

    এই শর্তগুলো উভয় দেশের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা ও অন্যান্য শুল্ক হ্রাস

    প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও ঘোষণা করেছেন যে, আগামী এপ্রিল মাসে তিনি চীন সফর করবেন, এবং পরবর্তীতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসবেন। এই উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন যে, বিরল খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান ঘটেছে, যা উভয় দেশের জন্য একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।

    চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানিয়েছেন যে, নতুন শুল্কহার তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। এছাড়া, চীনের ফেন্টানিলের ওপর যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, তাও কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। এটি মাদকের অবৈধ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চীনকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    বাণিজ্য চুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট

    পর্যবেক্ষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা এই উদ্যোগগুলোর মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। রয়টার্সের পূর্ববর্তী এক প্রতিবেদনে এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে, দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ বৈঠকটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহেই আয়োজিত হয়েছিল। এর অর্থ হলো, আমেরিকা চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে একটি স্থায়ী সমাধান চাইছে।

    এমনকি এই বৈঠকের আগেও বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত কাঠামোগত ঐকমত্যের কথা জানানো হয় রয়টার্সের এক সংবাদে। সেখানে বলা হয়েছিল যে, পারস্পরিক বিরোধ আমলে নিয়েও বাণিজ্য চুক্তির একটি কাঠামোর বিষয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এই অগ্রিম প্রস্তুতি এবং বর্তমান শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্তগুলো দুই দেশের মধ্যে একটি বৃহত্তর এবং স্থায়ী বাণিজ্যিক সমঝোতার পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here