More

    ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি আগামী সপ্তাহে, ক্যাডার পদ ১৭০০

    দেশের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের জন্য বহুল আকাঙ্ক্ষিত ৫০তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও, এর সম্ভাবনা ক্রমশ উজ্জ্বল হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে চলতি সপ্তাহে প্রকাশের কথা থাকলেও, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহেই এই বহু প্রতীক্ষিত বিজ্ঞপ্তি আলোর মুখ দেখতে পারে। এ বিসিএসের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার বিভিন্ন ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে, যা দেশের কর্মসংস্থান বাজারে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে এবং মেধাবীদের সরকারি সেবায় যোগদানের পথ প্রশস্ত করবে।

    ৫০তম বিসিএস: পদসংখ্যা ও নিয়োগের প্রত্যাশা

    পিএসসি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৫০তম বিসিএসে প্রায় ৩ হাজার পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে, যা দেশের সরকারি চাকরির ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোর একটি। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০-এরও বেশি পদ ক্যাডার সার্ভিসভুক্ত, যা সরাসরি সরকারি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে মেধাবী কর্মকর্তাদের আকৃষ্ট করবে। বাকি প্রায় এক হাজার পদ নন-ক্যাডার ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত হলেও, পিএসসি ইঙ্গিত দিয়েছে যে এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে, দেশের সরকারি কর্মসংস্থান খাতে একটি বিশাল সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশীর স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে।

    বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব এবং নতুন সময়সীমা

    সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তারা বুধবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি প্রায় ২ হাজার ৮০০ পদের চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৭০০-এর বেশি পদ ক্যাডার সার্ভিসভুক্ত। নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১ হাজার বলা হলেও, পিএসসির ক্যাডার শাখার কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, এই পদ সংখ্যা বাড়তে পারে। চলতি সপ্তাহে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জোর চেষ্টা চালানো হয়েছিল, কিন্তু কিছু প্রশাসনিক ও কারিগরি কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে, পিএসসি আশাবাদী যে আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে, অর্থাৎ আসন্ন সপ্তাহের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যাপারে তারা সফল হবেন। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে, যা আগ্রহী প্রার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা প্রদান করবে।

    বিসিএস আবেদন প্রক্রিয়ায় পিএসসির যুগান্তকারী পরিবর্তন

    ৫০তম বিসিএস-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রাক্কালে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) আবেদনকারীদের সুবিধার্থে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে, যা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের পথকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করবে। এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন ফি এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে।

    • আবেদন ফি হ্রাস: সাধারণ প্রার্থীদের জন্য পূর্বে নির্ধারিত ৭০০ টাকার আবেদন ফি কমিয়ে মাত্র ২০০ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য আবেদন ফি ১০০ টাকা থেকে কমিয়ে মাত্র ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি আর্থিক সীমাবদ্ধতাযুক্ত প্রার্থীদের জন্য একটি বিশাল স্বস্তি এনে দেবে এবং আবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।

    • বয়সসীমা বৃদ্ধি: এছাড়াও, বিসিএসে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩২ বছর করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সী যোগ্য প্রার্থীদের জন্য সরকারি চাকরিতে প্রবেশের একটি মূল্যবান সুযোগ তৈরি করবে। এটি নিঃসন্দেহে অসংখ্য তরুণ-তরুণীর সরকারি কর্মজীবনে প্রবেশের স্বপ্ন পূরণে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে, যারা পূর্বে বয়সসীমার কারণে আবেদন করতে পারতেন না।

    পূর্ববর্তী বিসিএস-এর চিত্র এবং প্রত্যাশিত প্রতিযোগিতা

    দেশের লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত তরুণের কাছে বিসিএস বরাবরই এক আকাঙ্ক্ষিত পরীক্ষা এবং এর প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তীব্র। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ৪৭তম সাধারণ বিসিএস-এর পরিসংখ্যান থেকেই এর ব্যাপক চাহিদা অনুমান করা যায়। ৪৭তম বিসিএসে মোট ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছিলেন, যেখানে মোট শূন্য ক্যাডার পদের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৮৭টি এবং নন-ক্যাডার পদ ছিল মাত্র ২০১টি। ৫০তম বিসিএসে পদের সংখ্যায় ভিন্নতা থাকলেও, আবেদনকারীদের তীব্র প্রতিযোগিতা একইরকম থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, পরিবর্তিত ফি কাঠামো এবং বয়সসীমা বৃদ্ধির কারণে আবেদনকারীর সংখ্যা এবার আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, যা পরীক্ষাটিকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলবে।

    উপসংহার

    সব মিলিয়ে, প্রায় তিন হাজার পদে নিয়োগের লক্ষ্যে ৫০তম বিসিএস-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেশের সরকারি চাকরির বাজারে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র নতুন কর্মসংস্থানই তৈরি করবে না, বরং দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে তরুণ ও মেধাবী নেতৃত্ব বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সুবর্ণ সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এখন থেকেই সুসংবদ্ধ ও নিবিড় প্রস্তুতি শুরু করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here