প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে, কারণ আবেদন প্রক্রিয়া আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন গতি আনার পাশাপাশি হাজার হাজার বেকার যুবকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। গত বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ১০ হাজার ২১৯টি শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা এই খাতের বৃহত্তম নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম। আগ্রহী ও যোগ্য প্রার্থীরা এখন থেকে অনলাইনে আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত সকল জেলা এবং তার অধীনস্থ সকল উপজেলা/শিক্ষা থানার স্থায়ী নাগরিকগণ এই সম্মানজনক পদে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন। এটি স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সহকারী শিক্ষক পদের বিস্তারিত বিবরণ
এই বৃহৎ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অধীনে সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড এবং যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবেদন করার পূর্বে প্রার্থীদের অবশ্যই নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক:
পদের নাম: সহকারী শিক্ষক
মোট পদসংখ্যা: ১০,২১৯টি
আবেদনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা:
- আবেদনকারীকে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ (৪ স্কেলে ন্যূনতম ২.২৫ এবং ৫ স্কেলে ন্যূনতম ২.৮) স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
- শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ অথবা সমমানের জিপিএ অথবা তৃতীয় শ্রেণি অথবা সমমানের সিজিপিএ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এই শর্তটি অত্যন্ত কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।
বেতন স্কেল: নির্বাচিত প্রার্থীরা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ১১,০০০-২৬,৫৯০ টাকা বেতনে নিয়োগ পাবেন।
গ্রেড: এটি ১৩তম গ্রেডের একটি পদ।
বয়সসীমা: আবেদনকারী প্রার্থীর বয়স ৩০ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩২ বছর হতে হবে। তবে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বয়সসীমা শিথিলযোগ্য হবে।
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও শর্তাবলী
আগ্রহী প্রার্থীদের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া এবং নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু বিশেষ নির্দেশনা ও শর্তাবলী অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। এই শর্তগুলো সঠিকভাবে মেনে চলা আবেদন প্রক্রিয়া সফল করার জন্য অপরিহার্য:
- আবেদন করতে ইচ্ছুক সকল প্রার্থীকে শুধুমাত্র অনলাইনের মাধ্যমে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। ম্যানুয়াল বা সরাসরি কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
- বিবাহিত মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে, তাঁরা তাঁদের স্বামী অথবা পিতার স্থায়ী ঠিকানার যেকোনো একটিতে আবেদন করতে পারবেন। এটি তাঁদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা, যা তাঁদের আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।
- এই নিয়োগ উপজেলা/শিক্ষা থানাভিত্তিক সম্পন্ন করা হবে। অর্থাৎ, প্রার্থী যে উপজেলা বা শিক্ষা থানার স্থায়ী বাসিন্দা, তাঁকে সেই নির্দিষ্ট উপজেলা/শিক্ষা থানার শূন্য পদের জন্য বিবেচিত করা হবে। এই স্থানীয়করণ প্রক্রিয়া নিয়োগের স্বচ্ছতা ও আঞ্চলিক চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
- নির্বাচিত প্রার্থীদেরকে নিজ উপজেলা/শিক্ষা থানাতেই চাকরি করতে হবে। তাঁদের বদলি নিজ উপজেলা/শিক্ষা থানার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যেই সীমিত থাকবে, যা তাঁদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও দায়িত্বশীলতা বিবেচনায়, ধূমপানসহ যেকোনো ধরনের মাদক গ্রহণের অভ্যাস রয়েছে এমন প্রার্থীরা আবেদন না করার জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকার শিশুদের জন্য একটি সুস্থ ও আদর্শ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
- আবেদন প্রক্রিয়া চলাকালীন বা নিয়োগের সময় প্রার্থীর সনদপত্র ও ছবি অবশ্যই ৯ম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে। এই সত্যায়ন প্রক্রিয়া প্রার্থীর প্রদত্ত তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে সহায়ক।
এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহী এবং যোগ্য প্রার্থীদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। সকল শর্তাবলী ও নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ করে আবেদন করলে, আপনিও হতে পারেন বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
