টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য, তার ব্যক্তিগত জীবন এবং বিভিন্ন মতামত নিয়ে অকপট ও সোজাসাপ্টা অবস্থানের জন্য বরাবরই পরিচিত। এই নির্ভীক স্পষ্টবাদিতার কারণে তিনি মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। তবে সম্প্রতি, জন্মান্তর এবং পুনর্জন্ম বিষয়ক তার কিছু মন্তব্য যেন নতুন করে বিতর্কের ঢেউ তুলেছে। তার এই সাহসী উক্তিগুলি সামাজিক মাধ্যমে কেবল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়ই তোলেনি, বরং ব্যাপক ট্রলিংয়েরও জন্ম দিয়েছে, যা বিনোদন জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে অপরাজিতা আঢ্য দৃঢ় কণ্ঠে জন্মান্তরে তার অটল বিশ্বাসের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি অবশ্যই জন্মান্তরে বিশ্বাস করি।” এই বিশ্বাসকে আরও গভীরে নিয়ে গিয়ে তিনি এক চমকপ্রদ দাবি করেন। তার মতে, তিনি নিজেই তার ঠাকুরমা নিরুপমা আঢ্যর পরবর্তী জন্ম। অভিনেত্রী জোর দিয়ে বলেন, “নিরুপমা আঢ্যই আমি। এটা আমি ভীষণভাবে বিশ্বাস করি। আমিই আমার ঠাকুমা।” এই মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই জনমনে কৌতূহল এবং বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
জন্মান্তরের এই গভীর বিশ্বাস সম্পর্কে অপরাজিতা আঢ্য আরও বলেন যে, এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা বা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই ধরনের জ্ঞান কেবলমাত্র সুগভীর সাধনার মাধ্যমেই অর্জন করা যায়। তিনি উল্লেখ করেন, “এমন অনেক কিছু আছে যা বলা যাবে না। যেগুলো সাধনা না করলে জানা যায় না।” তার মতে, বর্তমান জীবনটিই তার অন্তিম জন্ম। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, “আমার এটাই শেষ জন্ম। এরপর আমার আর জন্ম হবে না। আমি জন্মাতে চাইও না।” তবে তার এই বিশ্বাস শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি জানান, “তবে আমার ঠাকুরমা যে আমি, এটা আমার বাড়ির লোক বিশ্বাস করে।”
জন্মান্তরে তার এই বিশ্বাসের পাশাপাশি অপরাজিতা আঢ্য আরও দাবি করেন যে, তিনি নাকি অবিকল তার ঠাকুরমার মতোই দেখতে। এই শারীরিক সাদৃশ্য তার জন্মান্তরের বিশ্বাসকে আরও জোরালো করে তুলেছে। তিনি তার পারিবারিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন যে, তার পরিবারে কোনো কন্যাসন্তান ছিল না, শুধুমাত্র একজনকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ঠাকুরমার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি কন্যাসন্তানের, এবং সেই অপূর্ণ বাসনা পূর্ণ করতেই তিনি অপরাজিতার রূপে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন বলে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন।
নিজের জন্ম নিয়ে অপরাজিতা আঢ্য জানান, “আমি আমার ঠাকুরমা মারা যাওয়ার তিন বছর পর জন্মেছি।” তার জন্মটিও খুব সহজ ছিল না বলে তিনি উল্লেখ করেন, যা তার মতে, এই বিশেষ জন্মের ইঙ্গিতবাহী। নিজের অস্তিত্বের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে তিনি বলেন, “আমি আমার ইচ্ছায় এই পৃথিবীতে এসেছি, আমার ইচ্ছাতেই এই পৃথিবী থেকে চলে যাব।” এই উক্তির মাধ্যমে তিনি নিজের জীবনযাত্রার ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেন। এছাড়াও, তিনি তার ঐশ্বরিক সংযোগের প্রতি অটল বিশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন, “আমার সঙ্গে ঈশ্বর সবসময় রয়েছেন, এটা আমি প্রাণপণ বিশ্বাস করি।”
অপরাজিতা আঢ্যের সাহসী উক্তি: আধ্যাত্মিকতা ও বিতর্কের মিশেল
অপরাজিতা আঢ্যের এই ধরনের ব্যক্তিগত, গভীর এবং বিতর্কিত মন্তব্যগুলি বিনোদন জগতের গণ্ডি পেরিয়ে এক ব্যাপক সামাজিক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। তার জন্মান্তর ও পুনর্জন্ম সংক্রান্ত বিশ্বাস, বিশেষত নিজের ঠাকুরমার পুনর্জন্ম হওয়ার দাবি, একদিকে যেমন ভক্তদের কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে বহু নেটিজেন এর বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং ট্রল করছেন। এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে যে, অপরাজিতা আঢ্য কেবল একজন দক্ষ অভিনেত্রীই নন, বরং ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও মতামত প্রকাশে তিনি সর্বদা নির্ভীক এবং স্পষ্টভাষী। তার এই উক্তিগুলি হয়তো অনেককে আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে উৎসাহিত করবে, আবার অনেককে সমালোচনার সুযোগ করে দেবে। কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট যে, তিনি তার বিশ্বাস নিয়ে মোটেও সংশয়ে নন এবং তা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন না।
