বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশ সেবার এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করার স্বপ্ন দেখছেন? আপনার জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ২০২৬ সালের অফিসার ক্যাডেট ব্যাচে (দ্বিতীয় গ্রুপ) যোগদানের জন্য যোগ্য ও আগ্রহী তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। এটি শুধু একটি চাকরি নয়, বরং নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা এবং দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত এক পেশাদার জীবনের হাতছানি।
নৌবাহিনীর একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে আপনি এমন এক পরিবেশে প্রশিক্ষিত হবেন, যা আপনাকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করবে। এখানে কঠোর পরিশ্রম, আত্মত্যাগ এবং উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনি নিজেকে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত করার সুযোগ পাবেন। সমুদ্রের বিশালতায় দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবদান রাখার এই মহৎ সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
আবেদন প্রক্রিয়া ও সময়সীমা
বর্তমানে এই সম্মানজনক পদের জন্য আবেদনপ্রক্রিয়া পুরোদমে চলমান রয়েছে। আগ্রহী প্রার্থীরা ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের মধ্যে তাদের আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন। যোগ্য প্রার্থীদেরকে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য নৌবাহিনীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন এবং দ্রুত আপনার আবেদন নিশ্চিত করুন।
পদের নাম
এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত পদটি হলো: অফিসার ক্যাডেট।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: দেশ সেবার পথে প্রথম ধাপ
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদানের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণ করা আবশ্যক। প্রার্থীদের উচ্চশিক্ষার ভিত্তি মজবুত হওয়া অত্যাবশ্যক, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও গণিতের ক্ষেত্রে।
সাধারণ প্রার্থীদের জন্য:
- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অথবা সমমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে।
- উভয় পরীক্ষার (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক) ফলাফলের ক্ষেত্রে, যেকোনো একটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৫.০০ এবং অপরটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.৫০ অর্জন করা বাধ্যতামূলক।
- বিশেষভাবে উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়গুলো আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। এই বিষয়গুলোতে পারদর্শিতা নৌবাহিনীর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দায়িত্ব পালনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইংরেজি মাধ্যমের প্রার্থীদের জন্য:
- ও লেভেলে (O-Level) ছয়টি বিষয়ের মধ্যে ন্যূনতম তিনটিতে ‘এ’ গ্রেড এবং বাকি তিনটিতে ‘বি’ গ্রেড থাকতে হবে।
- এ লেভেলে (A-Level) ন্যূনতম একটিতে ‘এ’ গ্রেড এবং দুটি বিষয়ে ‘বি’ গ্রেড অর্জন করা আবশ্যক।
- এই ক্ষেত্রেও, গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়গুলো উভয় পরীক্ষায় আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত প্রার্থীদের জন্য:
- সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত প্রার্থীরাও এই পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা সাধারণ প্রার্থীদের মতোই প্রযোজ্য হবে।
- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক/ সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে যেকোনো একটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৫.০০ এবং অপরটিতে ন্যূনতম জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
- উভয় পরীক্ষায় গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকা আবশ্যক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ২০২৫ সালের এইচএসসি/ সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরাও এই পদে আবেদনের সুযোগ পাবেন। এটি তাদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ, যারা তাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই দেশ সেবার এই মহৎ পেশায় যোগদানের প্রস্তুতি নিতে চান।
বয়সসীমা ও শারীরিক যোগ্যতা: সুগঠিত দেহ ও সুতীক্ষ্ণ মন
নৌবাহিনীতে যোগদানের জন্য শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য অপরিহার্য। নির্দিষ্ট বয়সসীমা এবং শারীরিক মাপকাঠি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
বয়সসীমা
০১/০৭/২০২৬ তারিখ পর্যন্ত আবেদনকারীর বয়স নিম্নলিখিত শর্তাবলী পূরণ করতে হবে:
- যারা এইচএসসি/ সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের জন্য বয়স ১৬ বছর ৬ মাস থেকে ২১ বছর হতে হবে।
- স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৮ থেকে ২৩ বছর নির্ধারিত। এটি একটি বিস্তৃত সুযোগ, যা উচ্চশিক্ষিত তরুণদেরও নৌবাহিনীতে যোগদানের পথ খুলে দেয়।
শারীরিক যোগ্যতা
শারীরিক সক্ষমতা নৌবাহিনীর চাকরিতে একটি মৌলিক প্রয়োজন। কঠোর প্রশিক্ষণ ও প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করার জন্য সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়া আবশ্যক।
- পুরুষ প্রার্থীদের জন্য:
- ন্যূনতম উচ্চতা: ১.৬৩ মিটার (৫ ফুট ৪ ইঞ্চি)।
- বুকের মাপ: স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি এবং প্রসারিত অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি হতে হবে।
- নারী প্রার্থীদের জন্য:
- ন্যূনতম উচ্চতা: ১.৬০ মিটার (৫ ফুট ৩ ইঞ্চি)।
- বুকের মাপ: স্বাভাবিক অবস্থায় ২৮ ইঞ্চি এবং প্রসারিত অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি নির্ধারিত।
- দৃষ্টিশক্তি: উভয় চোখেই ৬/৬ দৃষ্টিশক্তি থাকা বাধ্যতামূলক। তবে, যেকোনো ধরনের দৃষ্টি সংশোধনী অপারেশন যেমন LASIK/PRK/SMILE করানো প্রার্থীরা অযোগ্য বিবেচিত হবেন। এটি প্রাকৃতিক দৃষ্টিশক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে।
বেতন ও ভাতা: একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশার আকর্ষণ
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণকালীন সময়ে নিয়মিত আকর্ষণীয় ভাতা প্রদান করা হয়। এই ভাতা শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা নয়, বরং এটি তাদের প্রতি রাষ্ট্রের সম্মান ও বিনিয়োগের প্রতীক। সফলভাবে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর, অফিসার ক্যাডেটগণ নৌবাহিনীর একজন সম্মানিত কর্মকর্তা হিসেবে কমিশন লাভ করেন এবং দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ পান। এরপর থেকে তারা দেশের প্রচলিত বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন ও অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, যা একটি নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে। এই পেশায় রয়েছে অপার সম্ভাবনা, নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ এবং দেশের প্রতি সরাসরি অবদান রাখার এক সুবর্ণ পথ।
যারা নিজেদেরকে চ্যালেঞ্জিং এবং সম্মানজনক একটি পেশায় দেখতে চান, দেশের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই অফিসার ক্যাডেট ব্যাচে যোগদান একটি অনন্য সুযোগ। এখনই আবেদন করুন এবং আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করুন!
