দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে বিবাহিত নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক গতিশীলতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সন্তান লালন-পালনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক দায়িত্ব সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের সরে যাওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যেখানে কর্মজীবী মায়েরা তাদের পেশাগত জীবন এবং পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় শ্রমবাজারে নারীর স্থিতিশীলতা: কর্মবিরতি কমছে, কর্মসংস্থান বাড়ছে
দেশটির জাতীয় ডেটা অফিস কর্তৃক গত ২০ নভেম্বর প্রকাশিত জরিপে জানা যায়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তান রয়েছে এমন বিবাহিত নারীদের কর্মসংস্থানের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একই সময়ে, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে কর্মজীবন থেকে বিরতি (ক্যারিয়ার বিরতি) নেওয়া নারীর সংখ্যাও নেমে এসেছে রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এটি শুধু একটি পরিসংখ্যানগত পরিবর্তন নয়, বরং দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজে নারীর ভূমিকা এবং কর্মজীবনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির একটি গভীর প্রতিফলন।
জরিপের বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে নাবালক সন্তানসহ ১৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী বিবাহিত নারীদের মধ্যে কর্মবিরতির হার ছিল ২১.৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১.৪ শতাংশ কম। এই হার ২০১৪ সালে তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে সর্বনিম্ন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, গত প্রায় এক দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে বিবাহিত নারীদের অংশগ্রহণে এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন এসেছে। ঐতিহ্যগতভাবে, বিবাহ, গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান, শিশুর যত্ন এবং অন্যান্য পরিবারকেন্দ্রিক বিষয়গুলো নারীদের কর্মজীবন থেকে সরে আসার প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। তবে, বর্তমান প্রবণতা সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে।
কর্মবিরতিতে সামগ্রিক পতন
শুধুমাত্র নাবালক সন্তান রয়েছে এমন নারীদের ক্ষেত্রেই নয়, সন্তান থাকুক বা না থাকুক—সব ধরনের বিবাহিত নারীদের মধ্যে কর্মবিরতিতে থাকা নারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫ হাজার, যা গত বছরের তুলনায় ১ লক্ষ কম। সামগ্রিক কর্মবিরতির হার কমে ১৪.৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১৪ সালের পর সর্বনিম্ন। এই পরিসংখ্যানটি দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মজীবী নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহায়ক ব্যবস্থার উন্নতির ইঙ্গিত বহন করে। এটি নারীর ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
কোন বয়সে কর্মবিরতি সর্বাধিক?
কর্মবিরতির সংখ্যা বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণ করলে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য উঠে আসে। সংখ্যাগত দিক থেকে ৪০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে কর্মজীবন থেকে বিরতির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়, যার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫ হাজার। এর ঠিক পরেই রয়েছে ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী নারীরা (২ লাখ ৩৪ হাজার) এবং ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীরা (১ লাখ ৯৬ হাজার)।
তবে, হার হিসাবে বিশ্লেষণ করলে চিত্রটি কিছুটা ভিন্ন। এক্ষেত্রে, ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে চাকরি থেকে বিরতির হার ২১.৮ শতাংশ, যা সর্বাধিক। এই বয়সেই সাধারণত সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে, যা কর্মজীবনের ধারাবাহিকতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই বয়সের নারীরা প্রায়শই কর্মজীবন ও মাতৃত্বের দ্বৈত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, তবে সামগ্রিক প্রবণতা প্রমাণ করে যে, তাদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার ইচ্ছাও দৃঢ় হচ্ছে।
কর্মসংস্থানে নতুন রেকর্ড
এই ইতিবাচক পরিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বিবাহিত নারীদের সামগ্রিক কর্মসংস্থান হারে নতুন রেকর্ড স্থাপন। দেশটিতে বিবাহিত নারীদের সামগ্রিক কর্মসংস্থানের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭.৩ শতাংশে। আরও উৎসাহব্যঞ্জক তথ্য হলো, ১৮ বছরের নিচে সন্তান থাকা বিবাহিত নারীদের কর্মসংস্থানের হার ৬৪.৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলো স্পষ্টতই দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে নারীদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং তাদের নিরন্তর অবদানকে তুলে ধরছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক বিকাশে নারীর ভূমিকা আরও সুসংহত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
