বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে যোগদানের স্বপ্ন লালন করেন অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), যখন তারা সম্প্রতি ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘোষণা প্রকাশ করেছে। বহুল প্রতীক্ষিত লিখিত পরীক্ষা আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। পিএসসি শুধু পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচি ও আসনবিন্যাসই প্রকাশ করেনি, একই সাথে পরীক্ষার্থীদের জন্য কঠোরভাবে অনুসরণীয় একগুচ্ছ নির্দেশাবলীও জারি করেছে, যা একটি সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠু পরীক্ষা আয়োজনে অপরিহার্য। এই ঘোষণা একদিকে যেমন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করেছে, তেমনি অন্যদিকে প্রয়োজন হয়ে উঠেছে পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন।
পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলী: সুষ্ঠু অংশগ্রহণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় গাইডলাইন
পিএসসি কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনাবলীগুলো পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের আচরণ, সামগ্রী ব্যবহার এবং সময়ানুবর্তিতার উপর জোর দেয়। প্রতিটি প্রার্থীকে এই নির্দেশাবলী গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া উচিত:
১. সময়ানুবর্তিতা ও প্রবেশাধিকার: পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশাধিকারের সময়সীমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা হলের গেট ঠিক সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বন্ধ হয়ে যাবে। এই নির্ধারিত সময়ের পর কোনো অবস্থাতেই কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। তাই, সকল প্রার্থীকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে এবং শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়ো পরিহার করতে যথেষ্ট সময় হাতে রেখে কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
২. সকল বিষয়ে অংশগ্রহণ আবশ্যিক: ‘সাধারণ এবং কারিগরি/পেশাগত’ উভয় ক্যাডারের জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের সংযুক্ত সকল বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা আবশ্যক। কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে অনুপস্থিতি সেই ক্যাডারের জন্য পরীক্ষার্থীর অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাই, প্রতিটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া জরুরি এবং কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো বিষয়ে অনুপস্থিত থাকা উচিত নয়।
৩. পৃথক প্রবেশপত্র ও এর ব্যবহার: ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রতিটি প্রার্থীর নামে পৃথক প্রবেশপত্র জারি করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের আবশ্যিকভাবে সরকারি কর্ম কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এই নির্দিষ্ট প্রবেশপত্রটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট কপি সহ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। বিশেষভাবে মনে রাখবেন, প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) টেস্টের প্রবেশপত্র দিয়ে কোনোভাবেই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে না। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা, যার ব্যত্যয় ঘটলে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত সামগ্রী
পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং যেকোনো প্রকার অসদুপায় রোধ করতে কিছু নির্দিষ্ট সামগ্রী পরীক্ষা কেন্দ্রে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:
- মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস: কোনো প্রকার মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, হাতঘড়ি, পকেটঘড়ি, ইলেকট্রনিক ঘড়ি (স্মার্ট ওয়াচ) এবং সব ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগযন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা বা ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এই নির্দেশনার লঙ্ঘন গুরুতর শাস্তি ডেকে আনতে পারে।
- পাঠ্যপুস্তক ও আনুষঙ্গিক: পরীক্ষার হলে কোনো প্রকার বইপুস্তক, নোটস, অথবা সংশ্লিষ্ট কোনো মুদ্রিত বা হস্তলিখিত সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
- ব্যক্তিগত সামগ্রী: ব্যাগ, মানিব্যাগ, ব্যাংক কার্ড/ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি ব্যক্তিগত সামগ্রী পরীক্ষা কক্ষে আনা যাবে না। পরীক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখার জন্য নির্ধারিত কোনো স্থান থাকবে না, তাই অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না আনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ক্যালকুলেটর ব্যবহারের নিয়মাবলী:
- আবশ্যিক বিষয়ের জন্য: গাণিতিক যুক্তিসহ অন্যান্য আবশ্যিক বিষয়ের ক্ষেত্রে কেবল সাধারণ নন-প্রোগ্রামেব্ল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে।
- পদসংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত বিষয়ের জন্য: গণিত, ফলিত গণিত, পদার্থবিদ্যা, ফলিত পদার্থ, ইলেকট্রনিকস, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, মার্কেটিং, কম্পিউটার সায়েন্স, পরিসংখ্যান এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো পদসংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত বিষয়ের ক্ষেত্রে সায়েন্টিফিক নন-প্রোগ্রামেব্ল ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। তবে, অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে ক্যালকুলেটরটি কোনোভাবেই প্রোগ্রামেব্ল বা ডেটা স্টোর করার ক্ষমতা সম্পন্ন না হয়।
৬. মুখ ও কান উন্মুক্ত রাখা: পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীরা মুখ ও কানের ওপর কোনো প্রকার আবরণ রাখবেন না। এই নির্দেশনাটি পরীক্ষার্থীদের পরিচয় নিশ্চিত করা এবং পরীক্ষার হলে একটি স্বচ্ছ ও নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। এটি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য পরীক্ষার্থীদের সহজে শনাক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করে।
৭. পরিসংখ্যানিক সারণি ব্যবহারের অনুমতি: পদসংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান (বিষয় কোড-৯৮১) বিষয়ের পরীক্ষার্থীরা একটি বিশেষ সুবিধা পাবেন। তারা Hypothesis (অনুমান ও নাস্তিকল্পনা) Testing এবং পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে ব্যবহৃত পরিসংখ্যানিক সারণি (Statistical Tables) পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবেন। তবে, এই সারণিতে কোনো প্রকার অতিরিক্ত নোট বা অননুমোদিত তথ্য লেখা থাকা চলবে না এবং এর ব্যবহার নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
সকল পরীক্ষার্থীকে সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত সকল নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে নিজেদের প্রস্তুত করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এসব নিয়মাবলী কঠোরভাবে মেনে চলা একটি সুশৃঙ্খল এবং নিরপেক্ষ পরীক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল পরীক্ষার্থীর জন্য রইল শুভকামনা ও সাফল্য প্রার্থনা।
