বিসিএস, বাংলাদেশের সরকারি চাকরির সর্বোচ্চ এবং অন্যতম কাঙ্ক্ষিত ক্ষেত্র। হাজারো স্বপ্নচারী তরুণ-তরুণীর পদচারণায় মুখর এই যাত্রার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো মৌখিক পরীক্ষা। সেই ধারাবাহিকতায়, ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এটি সেই ১ হাজার ২১৯ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর জন্য চূড়ান্ত ধাপের প্রবেশদ্বার, যাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চূড়ান্ত সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে।
মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি ও স্থান
গতকাল ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, পিএসসি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার বিস্তারিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ২ নভেম্বর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই ভাইভা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ঢাকার আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কার্যালয়ে নির্ধারিত প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। প্রার্থীদের তাদের রোল নম্বর অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে ও সময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
লিখিত পরীক্ষার প্রেক্ষাপট
স্মরণ করা যেতে পারে যে, সম্প্রতি এই বিশেষ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়, যেখানে ১ হাজার ২১৯ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। এই মৌখিক পরীক্ষা তাদের মেধা, ব্যক্তিত্ব এবং সংশ্লিষ্ট পদগুলোর জন্য যোগ্যতা যাচাইয়ের একটি সুচিন্তিত প্রক্রিয়া। যারা এই কঠিন প্রতিযোগিতায় সফলভাবে লিখিত পরীক্ষার বাধা অতিক্রম করেছেন, তাদের জন্য এটি সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর শেষ সুযোগ।
বহু-নির্বাচনী (এমসিকিউ) লিখিত পরীক্ষার বিশদ বিবরণ
এর আগে, গত ১০ অক্টোবর দেশব্যাপী পরিচালিত হয়েছিল ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের বহু-নির্বাচনী (এমসিকিউ) লিখিত পরীক্ষা। সে সময় ঢাকার ১৮৪টি কেন্দ্রে প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজারেরও বেশি প্রার্থী আবেদন করলেও, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭০ জন। যা মোট আবেদনকারীর ৫৬.৪৯ শতাংশ। এই ব্যাপক সংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণই প্রমাণ করে এই বিশেষ বিসিএসের গুরুত্ব ও চাহিদা এবং সরকারি চাকরির প্রতি তরুণ প্রজন্মের গভীর আগ্রহ।
৪৯তম বিশেষ বিসিএস এর লক্ষ্য ও আবেদন প্রক্রিয়া
এই ৪৯তম বিশেষ বিসিএসটি মূলত সরকারি সাধারণ কলেজ এবং সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। এর অধীনে, ৬৫০টিরও অধিক পদে (সাধারণ কলেজে ৬৫৩ জন এবং সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে ৩০ জন) যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে, যা দেশের শিক্ষা খাতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং এর আবেদন প্রক্রিয়া চলে ২২ জুলাই দুপুর ১২টা ১০ মিনিট থেকে ২২ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। আবেদন প্রক্রিয়ার সময়, সাধারণ প্রার্থীদের জন্য ২০০ টাকা এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রার্থীদের জন্য ৫০ টাকা আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়াও, এই বিসিএসে আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ ৩২ বছর বয়সসীমা বেধে দেওয়া হয়েছিল, যা অনেক তরুণ প্রার্থীর জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছিল।
প্রার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
মৌখিক পরীক্ষা যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার চূড়ান্ত এবং অত্যন্ত সংবেদনশীল ধাপ। তাই উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এই ধাপে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। আত্মবিশ্বাস, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, সমসাময়িক ঘটনা সম্পর্কে ধারণা এবং তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তার যথাযথ প্রয়োগ এই ধাপে সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য, বিস্তারিত মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে (www.bpsc.gov.bd) পাওয়া যাবে। সকল প্রার্থীকে সময়সূচি ভালোভাবে দেখে প্রস্তুতি নেওয়ার এবং নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। শুভকামনা সকল প্রার্থীর জন্য যারা তাদের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে যাচ্ছেন।
