More

    সবচেয়ে ধনী নায়কের জন্মদিন আজ

    বলিউডের একচ্ছত্র অধিপতি, যিনি তার অনুরাগীদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন, তিনি আর কেউ নন – শাহরুখ খান। একদা আরব সাগরের তীরে বসে মুম্বাই এবং গোটা ভারত শাসন করার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তা আজ কেবল দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে এক অভূতপূর্ব আবেগ ও উন্মাদনার জন্ম দিয়েছে। কলকাতা থেকে শুরু করে কানাডা, কিংবা পাটনা থেকে প্যারিস – বিশ্বের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে আছে তাঁর অগণিত অনুরাগী। তিনি শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি বলিউডের ‘বাদশা’, এক জীবন্ত কিংবদন্তি এবং তারাদেরও তারা। তাঁর নাম যেন শুধুমাত্র একটি পরিচয় নয়, বরং এক গভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর অদম্য মুগ্ধতার প্রতীক।

    জন্ম, জন্মস্থান ও জীবনের বাঁক

    প্রতি বছর ২রা নভেম্বর, তাঁর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এক অভূতপূর্ব উৎসবের ঢেউ আছড়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। সাধারণ জন্মদিনের গণ্ডি পেরিয়ে এটি এখন এক বৈশ্বিক উদযাপনে পরিণত হয়েছে। ১৯৬৫ সালের এই দিনে দিল্লির এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে শাহরুখ খানের জন্ম। তাঁর জীবনের ষাট বসন্তের মধ্যে তিন দশকেরও বেশি সময় তিনি উৎসর্গ করেছেন সিনেমার জগতকে। যে যুবক একদা সামান্য কিছু কাপড়, একজোড়া স্বপ্নালু চোখ আর মায়ের একটি ছবি সম্বল করে দিল্লি থেকে পা রেখেছিলেন স্বপ্ননগরী মুম্বাইতে, কে জানত সেই অদম্য তরুণ একদিন বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তারকায় রূপান্তরিত হবেন? শাহরুখ খান আজ কেবল একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব নন; তিনি কারও কাছে স্বপ্নের প্রেমিক, কারও কাছে অদম্য প্রেরণা, কারও পথপ্রদর্শক গুরু, আবার অসংখ্য অনুরাগীর কাছে প্রিয়তম অভিনেতা। তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রাপথ কেবল সাফল্যের কাহিনি নয়, এটি অগণিত মানুষের আশা ও স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।

    শিক্ষাজীবন থেকে স্বপ্নের প্রথম পরিক্রমা

    শিক্ষাজীবনেও শাহরুখ খান ছিলেন স্বকীয়তার প্রতীক। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হংসরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তবে তাঁর মূল টান ছিল অভিনয়ের প্রতি। মঞ্চনাটক এবং পরবর্তীতে ছোট পর্দা দিয়েই তিনি অভিনয় জগতে নিজের উপস্থিতি জানান দেন। টেলিভিশনে প্রচারিত ‘ফৌজি’ এবং ‘সার্কাস’ নামের ধারাবাহিকগুলোতে দিল্লির সেই চনমনে, প্রাণবন্ত তরুণের অনবদ্য অভিনয় প্রতিভায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, তাঁর এই যাত্রাপথ কেবল দীর্ঘই হবে না, বরং তা উজ্জ্বল আলোকচ্ছটায় ভাস্বর হবে। তাঁর সেই ইঙ্গিত মিথ্যে হয়নি; গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মের মানুষের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে আসন গেড়েছেন।

    বলিউডে আগমন ও ব্যতিক্রমী ভূমিকা

    ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে তাঁর স্বপ্নের যাত্রা শুরু হয়। এই অভিষেক ছবিতেই তিনি তাঁর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন, যা এক নতুন তারকার আগমন বার্তা দেয়। তবে শাহরুখ কেবল গতানুগতিক নায়কের ছকেই আবদ্ধ থাকেননি। ‘বাজিগর’, ‘ডর’ এবং ‘আনজাম’-এর মতো ছবিগুলোতে অ্যান্টি-হিরোর চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় তরুণীদের হৃদয়ে এক ভিন্ন ধরনের প্রেমের শিহরণ জাগিয়েছিল। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, প্রেম এবং প্রতিশোধের সংমিশ্রণেও একজন নায়ক কীভাবে দর্শক হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলতে পারে। তাঁর এই ব্যতিক্রমী পছন্দগুলিই তাঁকে সমসাময়িক অভিনেতাদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল।

    তবে তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ১৯৯৫ সালের ঐতিহাসিক ছবি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’। এই ছবির মাধ্যমে তিনি নিজেকে বলিউডের ‘কিং অফ রোম্যান্স’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। রাজ ও সিমরানের অমর প্রেম কাহিনি ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এরপর ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘বীর-জারা’র মতো অসংখ্য রোম্যান্টিক ছবিতে তাঁর অভিনয় কোটি কোটি মানুষের মন জয় করে। তাঁর সাবলীল রোম্যান্স, স্বতন্ত্র স্টাইল এবং গভীর অভিব্যক্তি প্রতিটি চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলেছে। শাহরুখ খান শুধু একজন অভিনেতা নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আবেগ, যা ভারতীয় সিনেমার গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। তাঁর প্রভাব, তাঁর ক্যারিশমা এবং তাঁর মানবতাবিদ্যা তাঁকে কেবল একজন তারকার চেয়েও বেশি কিছুতে পরিণত করেছে – তিনি হয়ে উঠেছেন আশা ও স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি, যা আজও লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here