মহামারি কালের স্থবিরতা ভেঙে, বাঁশির মতো মিষ্টি সুরের উকুলেলের ঝংকারে আর বরিশালের আঞ্চলিক ভাষার স্বাদু গানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাতিয়ে তুলেছিলেন যিনি, সেই হাস্যোজ্জ্বল তরুণটি এবার আসছেন ছোট পর্দায়। ‘এ গেদু, সমেস্যা কী?’—এই গানটি দিয়ে শুধু সচেতনতার বার্তাই দেননি, মানুষের মনে জোগিয়েছেন অফুরন্ত হাসি আর আশার সঞ্চার। সেই পরিচিত মুখ, ‘কিটো ভাই’ নামেই যিনি সমধিক পরিচিত, অর্থাৎ মাসরুর রাব্বি ইনান, এবার অভিনয়শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন টেলিভিশন নাটকে। দর্শকরা তাকে দেখতে পাবেন ‘নাপতা’ নামক একটি বিশেষ নাটকে, যেখানে তিনি মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
‘নাপতা’: বরিশালের গল্প, ফুটবল আর এক নাপিতের জীবন
বরিশালের আঞ্চলিক শব্দ ‘নাপতা’, যার অর্থ নাপিত, এই ঐতিহ্যবাহী শব্দটিকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে এক ভিন্নধর্মী নাটক। গল্প এবং পরিচালনায় রয়েছেন প্রতিভাবান রাহাত মোহাম্মদ। প্রায় ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই বিশেষ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মাশরুর ইনান, যিনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ‘কিটো ভাই’ নামেই অগুনতি মানুষের কাছে পরিচিত। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ৪০ মিনিটের এই বহু প্রতীক্ষিত নাটকটি খুব শিগগিরই চ্যানেল আইয়ের টেলিভিশন চ্যানেল এবং তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে একযোগে সম্প্রচারিত হবে।
এই নাটকে মিশে আছে বরিশালের মাটির সোঁদা গন্ধ, সেখানকার মানুষের নিজস্ব হাস্যরস, হৃদয়ের গভীর অনুভূতিতে মোড়ানো প্রেম এবং সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। নির্মাতা আশা করছেন, ‘নাপতা’ নাটকটি দর্শকদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতার দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং তাদের মন ছুঁয়ে যাবে। এটি শুধু একটি বিনোদনমূলক পরিবেশনাই নয়, বরং বরিশালের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার একটি বাস্তবসম্মত প্রতিচ্ছবিও বটে।
ভাইরাল তারকা থেকে অভিনয়ের নতুন মঞ্চে
‘কিটো ভাই’ হিসেবে মাশরুর ইনানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছিল বৈশ্বিক করোনা মহামারির ক্রান্তিকালে। সেই সংকটময় সময়ে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তার তৈরি হাস্যরসাত্মক ভিডিও এবং গানগুলো মানুষের মুখে যেমন হাসি ফুটিয়েছে, তেমনি ছড়িয়ে দিয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা। তার কিছু গান, যেমন— ‘কিটো স্টে হোম সং’, ‘কিটো হ্যাপি সং’, এবং ‘সুপার হিরো সং’ — তাকে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। সে সময় থেকেই দর্শকরা তাকে একজন আশাবাদী এবং প্রাণবন্ত তরুণ মুখ হিসেবে গ্রহণ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশাল ক্ষেত্র পেরিয়ে এবার তিনি পা রাখছেন টেলিভিশনের বৃহত্তর মঞ্চে। নিজের সহজাত আঞ্চলিক ভাষার মজা, অভিনয়ের স্বতঃস্ফূর্ততা এবং স্বাভাবিক হাস্যরস দিয়েই তিনি আবারও দর্শকদের মন জয় করতে বদ্ধপরিকর। এটি তার জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে তার সৃজনশীলতা নতুন মাত্রায় প্রকাশিত হবে।
‘নাপতা’ নাটকের গল্পে উঠে এসেছে বরিশালের এক সাধারণ গ্রামের জীবন্ত চিত্র। এই গ্রামের জীবন আবর্তিত হয় ফুটবল খেলার উৎসবকে ঘিরে, যা সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রামের মাঠ, ফুটবল এবং সেই খেলার সাথে জড়িত মানুষগুলোর চুল কাটার স্টাইল—এ সবকিছুতেই একটি নাপিতের ভূমিকা অপরিহার্য। মাশরুর ইনান অভিনীত কেন্দ্রীয় চরিত্রটি এই গ্রামেরই এক নাপিত, যার জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় নাটকটির মূল কাহিনি। তার পেশা, তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক, গ্রামের ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সংঘাত—এ সবই অত্যন্ত নিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নাটকের পরতে পরতে। দর্শকরা এই নাটকের মাধ্যমে বরিশালের গ্রামীণ জীবনের এক অসাধারণ ও বাস্তবসম্মত চিত্র দেখতে পাবেন, যা একই সাথে আনন্দ, বেদনা এবং গভীর জীবনবোধের মিশ্রণে পরিপূর্ণ।
