বলিউডের মসলাদার বিনোদন জগতে হরর-কমেডি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে ম্যাডক ফিল্মস অগ্রদূত হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। দীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় সিনেমায়, বিশেষত হিন্দি চলচ্চিত্রে, হরর ও কমেডির মেলবন্ধন ছিল অনেকটাই পরীক্ষামূলক এবং অনুচ্চারিত। দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে কিছু কাজ হলেও, মূলধারার হিন্দি সিনেমার দর্শক এই ধারার স্বতন্ত্র পরিচয়ের অভাব বোধ করছিলেন। এই শূন্যতা পূরণ করে ম্যাডক ফিল্মস এমন একটি cinematic universe তৈরি করেছে যা কেবল বক্স অফিসেই ঝড় তোলেনি, বরং দর্শকদের মনেও এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তাদের হাত ধরেই আসে হরর-কমেডি ইউনিভার্স, যা শুরু হয়েছিল ‘স্ত্রী’ (Stree) সিনেমার অবিশ্বাস্য সাফল্যের মধ্য দিয়ে। সেই সাফল্যের রেশ ধরে সম্প্রতি দেওয়ালিতে মুক্তি পেয়েছে এই ইউনিভার্সের নবতম সংযোজন, ‘থামা’ (Thama)। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সম্মিলিত আয় বর্তমানে ১,৫০০ কোটি রুপির মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে, যা ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক অনবদ্য কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত রবিবার প্রযোজনা সংস্থা তাদের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই গর্বের সংবাদটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে।
হরর-কমেডি ইউনিভার্সের অপ্রতিরোধ্য যাত্রা: পিছনে ফেলল বাঘা বাঘা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে
ম্যাডক হরর-কমেডি ইউনিভার্স তাদের ঈর্ষণীয় ব্যবসায়িক সাফল্যের নিরিখে বলিউডের অন্যতম শক্তিশালী ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। আয়ের দিক থেকে তারা পেছনে ফেলেছে রোহিত শেঠির বহুল জনপ্রিয় ‘কপ ইউনিভার্স’ (Cop Universe) এবং এমনকি ব্লকবাস্টার ‘কেজিএফ’ (KGF) ফ্র্যাঞ্চাইজিকেও। আয়ুষ্মান খুরানা এবং রাশমিকা মান্দানা অভিনীত ভ্যাম্পায়ার কমেডি ‘থামা’-র সাম্প্রতিক সাফল্য ম্যাডক ফিল্মসের হরর-কমেডি ইউনিভার্সকে ১,৫০০ কোটি রুপির এই অভাবনীয় মাইলফলক ছুঁতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। ‘স্ত্রী’ দিয়ে শুরু হওয়া এই জয়যাত্রা একটার পর একটা হিট সিনেমার মাধ্যমে ক্রমশ আরও শক্তিশালী হয়েছে। এই জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য হিট ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে—‘মুনজ্যা’ (Munjya), ‘ভেড়িয়া’ (Bhediya) এবং ‘স্ত্রী ২’ (Stree 2)। প্রতিটি সিনেমাই নিজস্ব ভঙ্গিমায় দর্শক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে এবং বক্স অফিসেও দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে, যা এই ইউনিভার্সের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
১,৫০০ কোটি রুপির গৌরবময় পথচলা: এক বিশাল অর্জন
ম্যাডক ফিল্মস অত্যন্ত গর্বের সাথে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিশাল অর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের প্রকাশিত একটি পোস্টারে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যতম প্রধান অভিনেতারা, যেমন শ্রদ্ধা কাপুর, রাজকুমার রাও, বরুণ ধাওয়ান এবং আয়ুষ্মান খুরানা—সবাইকে একসাথে দেখা গেছে। পোস্টারের উপরের শিরোনামেই ফ্র্যাঞ্চাইজির সাফল্যের গল্প উজ্জ্বলভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে: ‘১,৫০০ কোটি!’ এই অর্জন কেবল একটি সংখ্যা নয়, এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে হরর-কমেডি ঘরানার পুনরুত্থান এবং ম্যাডক ফিল্মসের দূরদর্শিতার প্রতীক। পোস্টটিতে আবেগঘন ভাষায় লেখা ছিল, “চান্দেরি থেকে চাঁদ পর্যন্ত—ম্যাডক হরর-কমেডি ইউনিভার্সের এই যাত্রা স্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। আপনাদের অগণিত ভালোবাসা ও অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ; ১,৫০০ কোটি বিশেষ মুহূর্তের জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ‘থামা’ এখনো প্রেক্ষাগৃহে চলছে, টিকিট কেটে আপনারা সকলে এখনো দেখে ফেলতে পারেন!” এই বার্তা দর্শকদের প্রতি প্রযোজনা সংস্থার গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
ভারতের সর্বাধিক আয়কারী ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির মধ্যে চতুর্থ স্থান
১,৫০০ কোটি রুপি আয় করে ম্যাডক হরর-কমেডি ইউনিভার্স এখন ভারতের চতুর্থ সর্বাধিক আয়কারী চলচ্চিত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। ‘থামা’ মুক্তির পরপরই এই ফ্র্যাঞ্চাইজি এই বিশেষ অবস্থানে উঠে আসে, যা তাদের ধারাবাহিক সফলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই অর্জন ভারতীয় সিনেমার প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে দেখিয়েছে যে, যদি গল্প বলার সাহস এবং নির্মাণশৈলীতে নতুনত্ব থাকে, তবে অপ্রচলিত ঘরানাও ব্যাপক সাফল্য লাভ করতে পারে। ম্যাডক ফিল্মসের এই সাফল্য কেবল তাদের প্রযোজনা সংস্থার জন্যই নয়, বরং গোটা ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করেছে, যেখানে সৃজনশীলতা এবং বাণিজ্যিক সাফল্য একই সাথে হাতে হাত ধরে চলতে পারে। এটি অন্যান্য প্রযোজনা সংস্থাগুলিকেও নতুন ধরনের গল্প এবং ঘরানায় বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ভারতীয় সিনেমার ভবিষ্যৎকে আরও বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধ করবে।
