জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনুভা তিশা, যিনি তার সাবলীল অভিনয় এবং ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করে চলেছেন, সম্প্রতি একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। পারিবারিক ব্যস্ততা এবং ব্যক্তিগত অসুস্থতা সত্ত্বেও, পেশাদারিত্বের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর বর্তমান অবস্থা, কর্মজীবনের নতুন অধ্যায় এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
বর্তমান পরিস্থিতি ও মানসিক চ্যালেঞ্জ
সম্প্রতি তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা জানতে চাওয়া হলে, তাসনুভা তিশা জানান যে তিনি খুব একটা ভালো নেই। গত শুক্রবার থেকে তাঁর স্বামী অসুস্থ এবং ওই রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এই আকস্মিক অসুস্থতা তাঁদের পরিবারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অভিনেত্রী জানান, স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয় এবং তিনি নিজেও সারা রাত হাসপাতালে ছিলেন। সকাল বেলায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেই তিনি এই সাক্ষাৎকারে যোগ দেন, যা তাঁর পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে। বাচ্চাদের ঘুমিয়ে থাকার কারণে তিনি সে সময়েই কথা বলার জন্য সুবিধাজনক মনে করেন, কারণ বাচ্চারা জেগে উঠলে পরিস্থিতি সামলে কথা বলা আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
ব্যস্ততার মাঝে নতুন অধ্যায়: ধারাবাহিক নাটকে প্রত্যাবর্তন
স্বামী অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও, এই মুহূর্তে তাসনুভা তিশার শুটিংয়ের কাজ বাতিল হয়েছে। তিনি জানান, আজ শুটিংয়ের একটি পূর্বনির্ধারিত শিডিউল ছিল, যা অবশ্য আগেই বাতিল করা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি একটি নতুন চ্যানেলের জন্য একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছেন, যার নাম ‘টানাপোড়েন’। এটি পরিচালনা করছেন গুণী নির্মাতা বাপ্পী খান। পারিবারিক গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই নাটকটি তাঁর পেশাগত জীবনে নতুন ব্যস্ততা যোগ করেছে। এই প্রজেক্টটি তাঁর জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক নাটকে কাজ করা থেকে বিরত ছিলেন।
দৃঢ় পারিবারিক সমর্থন: কাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ
হাসপাতালে রাত যাপনের সময় সন্তানদের দেখভালের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাসনুভা তিশা কৃতজ্ঞতার সাথে জানান যে, তিনি যখনই বাড়ির বাইরে থাকেন, তাঁর মা-ই তাঁর সন্তানদের দেখাশোনা করেন। গত রাতেও বাচ্চারা তাঁর মায়ের কাছেই ছিল। এই অকৃত্রিম পারিবারিক সমর্থনই তাঁকে কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পরিবারের এই নিরন্তর সহযোগিতা ছাড়া নিয়মিতভাবে শুটিংয়ের মতো ব্যস্ত পেশায় সক্রিয় থাকা তাঁর পক্ষে সম্ভব হতো না। তাঁর মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এই ত্যাগ ও সমর্থন তাঁকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা যোগায়।
ধারাবাহিক নাটকে প্রত্যাবর্তনের কারণ ও প্রেক্ষাপট
তাসনুভা তিশার কর্মজীবনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তিনি মূলত একক নাটকেই বেশি অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ দুই বছর আগে তিনি ‘মা বাবা ভাই বোন’ শিরোনামের একটি সিরিয়ালে কাজ করেছিলেন। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করা থেকে বিরত থাকেন। এর পেছনে একাধিক কারণ ছিল; প্রতি মাসে দীর্ঘ সময় দিতে হওয়া এবং শিডিউল মেলানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ তাঁর কাছে প্রধান ছিল। এছাড়াও, মনমতো গল্প এবং দক্ষ নির্মাতার অভাবও তাঁকে ধারাবাহিক নাটকে কম কাজ করতে উৎসাহিত করেছে।
তবে, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। বর্তমান সময়ে ধারাবাহিক নাটকগুলোর দর্শকপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, তাসনুভা তিশা মনে করেন যে কিছু ভালো কাজ এখনো হচ্ছে। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে একক নাটকে খুব ভালো গল্প পাচ্ছিলেন না এবং সামগ্রিকভাবে কাজের সংখ্যার অবস্থাও অন্য সময়ের তুলনায় ভালো ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে যখন ‘টানাপোড়েন’ ধারাবাহিকের প্রস্তাব আসে, তখন এটি তাঁকে নতুন করে আগ্রহী করে তোলে। একটি নতুন চ্যানেলে, একটি শক্তিশালী পারিবারিক গল্প এবং বাপ্পী খানের মতো একজন পরিচালকের সাথে কাজ করার সুযোগ তাঁকে এই ধারাবাহিক নাটকে ফিরতে উৎসাহিত করেছে, যা তাঁর পেশাগত যাত্রায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
