More

    রাজনীতিতে নামার প্রসঙ্গে যা বললেন ইমন চক্রবর্তী

    সম্প্রতি সংগীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনা ডানা মেলেছে। বিগত কিছু সময় ধরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ইমনের সরব উপস্থিতি এই আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বিশেষত, মুখ্যমন্ত্রীর নিজ বাসভবনে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী কালীপূজায় তাঁর সপরিবারে অংশগ্রহণ, এই জল্পনাকে আরও জোরালো করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—তাহলে কি এবার সংগীতের মঞ্চ ছেড়ে রাজনীতির প্রাঙ্গণে পা রাখতে চলেছেন এই জনপ্রিয় গায়িকা?

    রাজনৈতিক জল্পনার জবাব: ইমনের স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া

    যখন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন জোট ও সমীকরণের আলোচনা তুঙ্গে, ঠিক তখনই এই জল্পনার বিষয়ে মুখ খুলেছেন ইমন চক্রবর্তী নিজেই। একটি বহুল প্রচলিত সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। কালীপূজার দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ইমন বলেন, “দিদির বাড়িতে আমি কালীপূজার দিন গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের যেভাবে যত্ন করেছেন, যে উষ্ণতা ও আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আমি, আমার কাকু এবং আমার স্বামী—আমরা তিনজনই উপস্থিত ছিলাম।”

    ইমন আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আতিথেয়তা তাঁদের মুগ্ধ করেছে। “দিদি নিজে হাতে আমাদের খাবার পরিবেশন করেছেন, দুটি সুন্দর শাড়ি উপহার দিয়েছেন এবং তাঁর সম্পূর্ণ ঘরও ঘুরে দেখিয়েছেন।” এই ব্যক্তিগত উষ্ণতাকে তিনি এক অত্যন্ত ব্যক্তিগত ও হৃদয়গ্রাহী মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত ছিল না বলেই তাঁর মত।

    রাজনীতিতে যোগদানের প্রশ্নে গায়িকার অবস্থান

    তবে রাজনীতিতে যোগদানের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নে ইমন চক্রবর্তী তাঁর অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, “এর মানে এই নয় যে, দিদি আমাকে ভোটে দাঁড়াতে বলবেন। আমার মনে হয়, দিদি আমার গান ভালোবাসেন, তিনি আমার একজন গুণগ্রাহী শ্রোতা মাত্র—ঠিক অন্য সবার মতোই। আমার সংগীতের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসা একান্তই শিল্পীর প্রতি একজন শ্রোতার শ্রদ্ধা।”

    ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “যদি ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক প্রস্তাব আসে, তখন আমি বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করব। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আসেনি বা কোনো আলোচনা হয়নি।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি আপাতত রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে থেকে নিজের শিল্পীসত্তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

    সংগীত সাধনা ও সামাজিক মাধ্যমে ইমনের ব্যস্ততা

    রাজনৈতিক জল্পনার মধ্যেও ইমন চক্রবর্তী যে তাঁর সংগীত সাধনা থেকে এতটুকু বিচ্যুত হননি, তার প্রমাণ তাঁর সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যক্রম। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিশেষ ট্রেন্ডে অংশ নিয়েছেন ইমন, যেখানে শিল্পীরা তাঁদের সাম্প্রতিক সফল কাজের প্রশংসা জানিয়ে এক বিনয়ী ভঙ্গিমায় নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করছেন। ইমনও তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এমনই একটি আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে লেখা ছিল:

    “আমাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স শ্রোতাদের মন জয় করেছে। স্টেজে আমাদের পাওয়ার-প্যাকড মুহূর্তগুলো দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে এক নতুন উন্মাদনা তৈরি করেছে। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা অনেক সুন্দর গান উপহার দিতে পেরেছি, যা মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।” এই পোস্টটি তাঁর শিল্পী হিসেবে আত্মবিশ্বাস এবং শ্রোতাদের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

    সব মিলিয়ে, ইমন চক্রবর্তী একদিকে যেমন তাঁর অসাধারণ সংগীত প্রতিভা দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে চলেছেন এবং নিত্যনতুন প্রজেক্টে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তেমনই অন্যদিকে তাঁর সম্ভাব্য রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। তবে তাঁর নিজের ভাষায়—“আমার সমস্ত মনোযোগ ও একাগ্রতা নিবদ্ধ রয়েছে কেবলই সংগীতের প্রতি। এখন আমার একমাত্র লক্ষ্য হলো আরও ভালো গান তৈরি করা এবং শ্রোতাদের বিনোদন দেওয়া।” এই বক্তব্য তাঁর বর্তমান অগ্রাধিকারকে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here