বাংলাদেশের টেলিভিশন জগতে এক দশক পূর্তির মাইলফলক স্পর্শ করলো জনপ্রিয় চ্যানেল দীপ্ত টেলিভিশন। ‘আলোয় ভুবন ভরা’ এই মর্মস্পর্শী স্লোগানকে ধারণ করে, ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল এই চ্যানেলটি। নিজেদের ভিন্নধর্মী ও সমৃদ্ধ কনটেন্ট দিয়ে অল্প সময়েই দর্শকদের হৃদয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে দীপ্ত টিভি, যা বাংলাদেশের সম্প্রচার শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এক দশকের পথচলা: দেশীয় ঐতিহ্য ও আন্তর্জাতিক মান
দীপ্ত টেলিভিশনের পথচলা কেবল সম্প্রচার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি ও বিনোদনের এক শক্তিশালী প্রতিচ্ছবি। শুরু থেকেই তারা দেশীয় ধারাবাহিক নাটকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের ড্রামা সিরিজ প্রচার করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। ‘পালকী’, ‘অপরাজিতা’, ‘খুঁজে ফিরি তাকে’–এর মতো মৌলিক দেশীয় নাটকগুলো দর্শকদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছিল। তবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগানো ড্রামা সিরিজ ‘সুলতান সুলেমান’ দিয়ে দীপ্ত টেলিভিশন যে আলোচনা তৈরি করেছিল, তা সত্যিই অভূতপূর্ব। এটি শুধু একটি সিরিজ ছিল না, এটি ছিল একটি নতুন ট্রেন্ডের সূচনা, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের রুচি ও প্রত্যাশায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিল।
দীপ্ত টেলিভিশন শুধু বিদেশি কনটেন্টের ওপর নির্ভর না করে, নিজেদের সৃজনশীলতা ও কারিগরি দক্ষতা দিয়ে দেশীয় নাট্যশিল্পেও অসামান্য অবদান রেখেছে। নিজেদের আধুনিক স্টুডিও, সুসজ্জিত সেট এবং দক্ষ জনবলের সমন্বয়ে তারা একের পর এক দর্শকপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে ‘ভালোবাসার আলো আঁধার’, ‘মধ্যবর্তিনী’, ‘খলনায়ক’, ‘মান অভিমান’ এবং ‘মাশরাফি জুনিয়র’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এবং দেশীয় নাটকের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ধারাবাহিক নাটকগুলো সমাজের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি নতুন প্রতিভাদের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে।
ডাবিং শিল্পে বিপ্লব ও আন্তর্জাতিক সিরিজের জয়যাত্রা
দীপ্ত টেলিভিশন শুধু দেশীয় কনটেন্ট নির্মাণেই থেমে থাকেনি, বরং বিদেশি ড্রামা সিরিজগুলোকে নিজস্ব অনুবাদক দল এবং অভিজ্ঞ কণ্ঠাভিনয়শিল্পীদের মাধ্যমে বাংলায় ডাব করে দেশের দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত পেশাদার এবং মানসম্মত, যা বিদেশি সিরিজগুলোকে স্থানীয় দর্শকদের কাছে আরও সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল। ‘বাহার’, ‘ফেরিয়া’, ‘জননী জন্মভূমি’, ‘সুলতান সুলেমান’ (যা পুনরায় প্রচারিত হয়েছে), ‘কোসেম’ এবং ‘রহস্যময়ী’ – এই সিরিজগুলো দর্শকদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানেও ‘খুশবু’, ‘রূপনগর’ এবং ‘গুড ডক্টর’-এর মতো আন্তর্জাতিক মানের ড্রামা সিরিজগুলো দীপ্ত টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে এবং দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে, যা চ্যানেলটির উদ্ভাবনী শক্তি ও দর্শকচাহিদা পূরণে তাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার স্বাক্ষর বহন করে। এই ডাবিং প্রক্রিয়াটি কেবল বিনোদনই দেয়নি, বরং বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতির সাথে বাংলাদেশি দর্শকদের সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।
দশ বছর পূর্তির বিশেষ আয়োজন
দীপ্ত টেলিভিশনের এক দশক পূর্তি উপলক্ষে আজ, ১৮ নভেম্বর, চ্যানেলটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দিনের শুরুতেই সকাল ৮টায় প্রচারিত হবে ‘দীপ্ত প্রভাতী’-এর সরাসরি গানের অনুষ্ঠান। এই বিশেষ পর্বে দর্শকদের মুগ্ধ করতে উপস্থিত থাকবেন জনপ্রিয় শিল্পী অণিমা রায়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকবেন ইন্দ্রাণী নিশি এবং প্রযোজনা করবেন গৌরব সরকার। গান ও সুরের মূর্ছনায় এই প্রভাতী অনুষ্ঠানটি দর্শকদের একটি সুন্দর দিনের সূচনা এনে দেবে।
এ ছাড়াও, এই বিশেষ দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে দেখানো হবে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান অভিনীত সাড়া জাগানো বাংলা সিনেমা ‘তুফান’। এই বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে দীপ্ত টেলিভিশন তাদের দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এবং আগামীতেও মানসম্পন্ন বিনোদন ও সংবাদ পরিবেশনে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে। দীপ্ত টিভির এই এক দশকের পথচলা বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে।
