More

    দুর্যোগ আর রাজনৈতিক আবহে মানবিক গল্প

    সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে খুব কম ছবিই মুক্তির আগে বা পরে এতটা আলোচনা-সমালোচনা এবং দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পেরেছে, যতটা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামের ‘দেলুপি’ পেরেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, চলচ্চিত্রপ্রেমীদের নিজস্ব টাইমলাইন, এমনকি বন্ধুবান্ধব ও অপরিচিতদের পোস্টেও এই নামটি ছিল এক তুমুল গুঞ্জনের বিষয়। নির্মাতারা ও অভিনেতাদেরও এই ছবি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

    মুক্তির পূর্বে ও পরে ব্যাপক প্রশংসা

    দেশের স্বনামধন্য নির্মাতা ও অভিনেতা আফজাল হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে ‘দেলুপি’ প্রসঙ্গে মন্তব্য করে লেখেন, “যাঁরা ভালো সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, যাঁরা দেশে ভালো চলচ্চিত্র নির্মিত হলে খুশি হন, তাঁদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি আনন্দের সংবাদ। কারণ, এটি একটি চমকে দেবার মতো অতি চমৎকার চলচ্চিত্র, যা সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে।” তাঁর এই মন্তব্য ছবিটিকে ঘিরে দর্শকদের মধ্যে এক নতুন প্রত্যাশা ও উদ্দীপনা তৈরি করে।

    গত ১৪ নভেম্বর ছবিটি দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন প্রখ্যাত সুরকার ও গীতিকার প্রিন্স মাহমুদ। তিনি ফেসবুকে লেখেন, “মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামের ‘দেলুপি’ দেখে আমি মন্ত্রমুগ্ধ। এমন গভীর মুগ্ধতা খুব কম ছবিই জাগাতে পারে। এর গল্পবুনন, দৃশ্যকল্পের শৈল্পিক বর্ণনা, চরিত্রের সূক্ষ্ম পরিবর্তন এবং সংগীতের সুপরিমিত প্রয়োগ আমাকে গভীরভাবে বিমোহিত করেছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এর পরিচালনা, সিনেমাটোগ্রাফি, সম্পাদনা এবং অভিনয়—সবকিছুই তাঁর মনে এক অবিস্মরণীয় ছাপ ফেলে গেছে। এই ধরনের উচ্চ প্রশংসা চলচ্চিত্রটি দেখার জন্য আমার ব্যক্তিগত আগ্রহকেও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল, যা আমাকে ‘দেলুপি’র এই অনন্য যাত্রায় শামিল হতে উৎসাহিত করে। এটি এমন এক গল্প যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষের টিকে থাকার অদম্য লড়াই যেন এক শক্তিশালী স্রোতে মিলিত হয়েছে।

    গল্পের গভীরে: বিপর্যস্ত সমাজ ও মানবিক আশ্রয়

    ছবিটির শুরু হয় এক অপ্রত্যাশিত মোড় নিয়ে। দেশের সরকারপ্রধান সাধারণ জনগণের গণবিপ্লব ও প্রবল প্রতিরোধের মুখে ক্ষমতা ত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা যখন পুরো জাতিকে গ্রাস করে আছে, ঠিক তখনই এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। আকস্মিক ও বিধ্বংসী বন্যা একটি গ্রামের জনজীবনকে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করে তোলে। এক রাতের ব্যবধানে মানুষের সাজানো ঘরবাড়ি, রুজিরোজগার, চাষের জমি ও যাতায়াতের পথঘাট—সবকিছুই পানির তোড়ে বিলীন হয়ে যায়

    এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, যাত্রাশিল্পী পরিবারের সন্তান পার্থ (চিরনজিৎ বিশ্বাস) তাঁর চোখের সামনেই নিজের পরিবারের কাঠামো ভেঙে পড়তে দেখেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন হতাশার কালো মেঘ ঘনীভূত, ঠিক তখনই পার্শ্ববর্তী গ্রামের নূপুরের (অদিতি রায়) সঙ্গে তাঁর গড়ে ওঠা সম্পর্কটি যেন এক অপ্রত্যাশিত আশ্রয় ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে ওঠে। এই সম্পর্কই পার্থকে এই কঠিন সময়ে টিকে থাকার নতুন প্রেরণা যোগায়, যখন প্রকৃতি ও রাজনীতির নির্মম আঘাত তাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here