ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে এক কিংবদন্তীর পতন। অগণিত দর্শককে হাসির অমলিন আনন্দ জুগিয়ে যিনি সুদীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনোদন দিয়েছেন, সেই প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক গোবর্ধন আসরানি আর নেই। ৮৪ বছর বয়সে তিনি আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, যা দেশের চলচ্চিত্র মহলে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
সংবাদ সংস্থা এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছে, মুম্বাইয়ে এই বরেণ্য অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন। সুদীর্ঘ অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে তিনি চিরবিদায় নিলেন। পারিবারিক সূত্র মতে, সান্তাক্রুজ শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে চলচ্চিত্র জগতের বহু গুণীজন ও শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন।
পাঁচ দশকের বর্ণময় কর্মজীবন
ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় এই কৌতুক অভিনেতা তাঁর বর্ণময় কর্মজীবনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁর অনন্য অভিনয়শৈলী এবং হাস্যরস পরিবেশনের অসাধারণ ক্ষমতা তাঁকে দর্শকদের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে দিয়েছিল। তাঁর অভিনীত প্রতিটি চরিত্রই যেন প্রাণ পেত তাঁর জাদুকরী স্পর্শে।
আসরানি তাঁর অভিনয় জীবনের ভিত্তি স্থাপন করেন ভারতের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এফটিটিআই) থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে। ১৯৬০-এর দশকে যখন তিনি অভিনয় জগতে পা রাখেন, তখন থেকেই তাঁর প্রতিভার ঝলক দেখা যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হিন্দি সিনেমার একটি পরিচিত এবং অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হন। তাঁর অভিনয় এতটাই স্বকীয় ছিল যে, খুব দ্রুতই তিনি নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করতে সক্ষম হন।
স্মরণীয় চরিত্র ও কালজয়ী সৃষ্টি
আসরানির অভিনয় জীবনের অন্যতম মাইলফলক ছিল কালজয়ী চলচ্চিত্র শোলে। এই ছবিতে তাঁর অভিনীত অদ্ভুত স্বভাবের জেলারের চরিত্রটি তাঁকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয় এবং ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অংশে পরিণত হয়। তাঁর বিখ্যাত সংলাপ “হাম আংরেজোঁ কে জামানে কে জেলার হ্যায়!” আজও দর্শকদের মুখে মুখে ফেরে এবং এটি হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় সংলাপ হিসেবে বিবেচিত। এই একটি চরিত্রই আসরানিকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছিল এবং তাঁর কমেডি অভিনয়কে নতুন সংজ্ঞা দিয়েছিল।
এছাড়াও, আসরানির অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে—ধামাল, হালচাল, হেরা ফেরি এবং খাট্টা মিঠা। এই প্রতিটি ছবিতেই তিনি তাঁর বিস্ময়কর অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করেছেন এবং পার্শ্ব চরিত্র হওয়া সত্ত্বেও প্রায়শই মুখ্য চরিত্রকেও ছাপিয়ে যেতেন। তাঁর সূক্ষ্ম অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি এবং ডায়ালগ ডেলিভারির ধরণ প্রতিটি চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলত এবং দর্শককে হাসিতে ভাসাত। তাঁর কমেডি শুধুমাত্র হাসির খোরাকই ছিল না, তাতে জীবনের রূঢ় বাস্তবতা এবং মানব চরিত্রের বিভিন্ন দিকেরও প্রতিচ্ছবি থাকত।
এক অপূরণীয় শূন্যতা
গোবর্ধন আসরানির প্রয়াণে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তাঁর হাসি, তাঁর অভিনয় এবং তাঁর উপস্থিতি চিরকাল দর্শকদের মনে অমলিন হয়ে থাকবে। তিনি কেবল একজন অভিনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন হাস্যরসের এক কিংবদন্তী, যিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তাঁর কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন। ভারতীয় কমেডি ঘরানায় তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। চলচ্চিত্র প্রেমীরা তাঁকে সর্বদা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করবে।
