দীর্ঘ এক দশক পর দেব ও শুভশ্রী জুটি যখন বড় পর্দায় ফিরে এলেন তাঁদের বহু প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ‘ধূমকেতু’ নিয়ে, তখন দর্শক মহলে এক অন্যরকম উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল। এই ব্লকবাস্টার সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। মুক্তির আগে প্রচারের উদ্দেশ্যে এই দুই তারকা যখন এক মঞ্চে এসেছিলেন, সেই মুহূর্তটি যেন ভক্তদের জন্য ছিল এক স্বপ্নপূরণের মতো।
দুই জনপ্রিয় অভিনেতাকে একসঙ্গে দেখে দর্শকদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছিল। অনেকেই ধারণা করছিলেন, হয়তো অতীতের সকল মান-অভিমান ভুলে ভবিষ্যতে আবারো এই জনপ্রিয় জুটিকে পর্দায় দেখা যাবে। তাঁদের রসায়ন আবারও সিনেপ্রেমীদের মন জয় করবে – এমনটাই ছিল সাধারণ প্রত্যাশা।
‘ধূমকেতু’ মুক্তির পর বিতর্ক ও দেবের মন্তব্য
কিন্তু সিনেমা মুক্তির পরপরই দেব-এর একটি বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে নতুন করে বিতর্কের ঝড় ওঠে। তিনি বলেছিলেন, ‘দুই সন্তানের মা শুভশ্রীর মুখে আর সেই ইনোসেন্স বা সারল্য নেই’। এই ধরনের কথা শুনে শুভশ্রী যে গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট বোঝা যায়। তাঁর এই অনুভূতিতে আঘাত লাগার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়, যেখানে নারী ও মাতৃত্বের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিভিন্ন মতামত উঠে আসে।
শুভশ্রীর অকপট জবাব: সততা, ফ্যান এবং নারীর কণ্ঠস্বর
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই পুরো বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন শুভশ্রী গাঙ্গুলী। দেবের সঙ্গে এক মঞ্চে আসা প্রসঙ্গে তিনি তাঁর দৃঢ় ও সৎ মনোভাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন,
“আমার জীবনে আমি যা কিছু করেছি, তা সব সময় সততার সঙ্গে করেছি। যখন আমি ‘ধূমকেতু’ ছবির প্রচারের জন্য সম্মতি জানিয়েছিলাম, সেটিও আমার সম্পূর্ণ সৎ উদ্দেশ্য থেকেই ছিল। সত্যি বলতে, আমাদের এই জুটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমরা কেউ ব্যক্তিগতভাবে বা ইন্ডাস্ট্রি থেকে কেউ তেমন কোনো প্রচেষ্টা করিনি। শুধুমাত্র আমাদের অগণিত ভক্তরাই তাঁদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা দিয়ে এই জুটিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ফ্যানেরা যেভাবে আমাদের ভালোবাসেন, তার ফলস্বরূপই সেই রাতে আমরা একসঙ্গে এসেছিলাম। তাঁদের এই ভালোবাসাকে আমি কখনোই অপমান করতে পারি পারি না।”
নিজের বক্তব্যকে আরও স্পষ্ট করে শুভশ্রী যোগ করেন,
“আমরা যে চরিত্রগুলোতে অভিনয় করি, সেগুলো হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের বলা কথাগুলো, আমাদের কর্ম এবং একে অপরের প্রতি আমাদের আচরণ চিরকাল থেকে যাবে। আমি কীভাবে একজন মানুষকে মূল্যায়ন করছি, কীভাবে একজন পুরুষকে দেখছি, এবং কীভাবে একজন পুরুষ আমাকে দেখছেন বা আমার সঙ্গে ব্যবহার করছেন – এই সবকিছুই মানুষের মনে গেঁথে থাকবে। অনেক সময় একজন নারীকে হয়তো সুর চড়াতে হয়, কারণ তখন তাঁর পক্ষে অনেক নিরপেক্ষ মানুষই সওয়াল করে থাকেন। তাঁদের কাছে এটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন হয় যে, আমি তোমাদের সঙ্গেই আছি, তোমাদের এই যুক্তির সঙ্গে আমিও একমত।”
অভিনেত্রীর ভাষ্যমতে, এই বিতর্কের জেরে দেবের একটি পরবর্তী সাক্ষাৎকারের দিকেও তিনি আলোকপাত করেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই আলোচনা কেবল একটি মন্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বৃহত্তর সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং নারী-পুরুষের সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে ছিল।
