More

    চাচাকে হারিয়ে চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে যে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মৌসুমী হামিদ

    জনপ্রিয় ছোটপর্দার অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ, যিনি একসময় টেলিভিশন পর্দায় সরব উপস্থিতির মাধ্যমে দর্শকদের মন জয় করেছিলেন, বর্তমানে তাঁকে নাটকে সেভাবে নিয়মিত দেখা না গেলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অনুরাগীদের সঙ্গে ঠিকই নিবিড় সংযোগ বজায় রেখেছেন। ব্যক্তিজীবনের আনন্দ-বেদনা, ভালো-মন্দ নানা অনুভূতি তিনি তাঁর বিশাল অনুরাগী মহলের সঙ্গে শেয়ার করে থাকেন। ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো তাঁর পোস্টে উঠে আসে সাবলীল ভঙ্গিতে, যা তাঁর ভক্তদের কাছে তাঁকে আরও বেশি আপন করে তুলেছে। তবে সম্প্রতি তাঁর একটি সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে তাঁর ভক্ত-অনুরাগী থেকে শুরু করে গোটা বিনোদন অঙ্গনকেও।

    ব্যক্তিগত শোক ও দেশীয় চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভ

    গত বৃহস্পতিবার, এক শোকাহত মুহূর্তে অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রোফাইলে একটি হৃদয়বিদারক ছবি পোস্ট করেন। ছবিটি ছিল সদ্যপ্রয়াত তাঁর চাচার সঙ্গে তোলা, যা ছিল গভীর ভালোবাসার স্মারক। এই ছবির সঙ্গেই তিনি তাঁর ব্যক্তিগত শোকের পাশাপাশি দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর পোস্টের প্রতিটি শব্দে ছিল গভীর বেদনা এবং মর্মস্পর্শী আর্তি।

    “সুস্থ মানুষটা মাটিতে দিয়ে আসলাম”: শোকের গভীরতা

    ছবিটির ক্যাপশনে মৌসুমী হামিদ তাঁর চাচার প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং অপ্রত্যাশিত বিয়োগের বেদনা প্রকাশ করে লিখেছেন, “সুস্থ মানুষটাকে মাটিতে দিয়ে আসলাম। আমার রক স্টার। এখন আকাশের তারা হয়ে গেল। রেস্ট ইন পিস কাকু।” এই কয়েকটি শব্দেই নিহিত ছিল এক সুস্থ মানুষের হঠাৎ চলে যাওয়ার মর্মন্তুদ হাহাকার। তিনি তাঁর চাচাকে কেবল আত্মীয় হিসেবে নয়, বরং একজন ‘রক স্টার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যা তাঁদের মধ্যকার বিশেষ বন্ধন ও গভীর শ্রদ্ধার পরিচায়ক। এই সম্বোধন ইঙ্গিত দেয়, তাঁর চাচা ছিলেন একজন প্রাণবন্ত, উদ্দীপনাময় এবং অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। তাঁর চলে যাওয়াকে তিনি আকাশের তারায় রূপান্তরিত হওয়ার উপমায় ব্যক্ত করেছেন, যা ভালোবাসার এক অনন্ত যাত্রাকে নির্দেশ করে।

    তিনি আরও যোগ করেন, “তোমার প্রাণহীন চেহারাটা এত হাসিমাখা ছিল যে, ওই চেহারাটাই সারাজীবন মনে থাকবে। তুমি ভালো থেকো। আসতেছি আমিও শিগগিরই হয়তো। আমরা একসঙ্গেই আবার তাড়াতাড়ি চিল করব কাকু।” এই কথাগুলো শুধুমাত্র শোকবার্তা ছিল না, ছিল গভীর ভালোবাসা, চিরন্তন স্মৃতিচারণ এবং এক অদ্ভুত আশা ও আত্মিক পুনর্মিলনের আকুলতা। চাচার নিথর কিন্তু হাসিমাখা মুখচ্ছবির স্মৃতি তাঁকে চিরকাল তাড়া করে ফিরবে, এমন আবেগঘন স্বীকারোক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি। ‘আসিছি আমিও শিগগিরই হয়তো’ এবং ‘আমরা একসঙ্গেই আবার তাড়াতাড়ি চিল করব’ – এই বাক্যগুলো মৃত্যুশোকের মাঝেও এক অভূতপূর্ব মানসিক সংযোগ এবং ভবিষ্যতে আত্মার মিলনের আকাঙ্ক্ষাকে ফুটিয়ে তোলে, যা পাঠককেও আপ্লুত করে তোলে।

    চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি চিরতরে বিশ্বাস হারানোর ঘোষণা

    নিজের ব্যক্তিগত শোকের পাশাপাশি, এই বিয়োগান্তক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মৌসুমী হামিদ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি তাঁর গভীর অনাস্থা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর সুস্পষ্ট মন্তব্য ছিল, “এই দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি চিরতরে বিশ্বাস উঠে গেল— চিরতরে।” এই শক্তিশালী বাক্যটি দ্ব্যর্থহীনভাবে বুঝিয়ে দেয় যে, তাঁর চাচার মৃত্যুতে দেশের চিকিৎসাসেবা প্রদান প্রক্রিয়ার কোনো না কোনো দিক তাঁকে মারাত্মকভাবে ব্যথিত ও হতাশ করেছে। যদিও তিনি সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেননি, তাঁর এমন দৃঢ় এবং দ্বিগুণভাবে উচ্চারিত ‘চিরতরে’ শব্দটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান দুর্বলতা বা ত্রুটির প্রতি এক কঠিন প্রশ্নের জন্ম দেয়। একজন পরিচিত ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে এমন সরাসরি মন্তব্য জনসাধারণের মনে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা অসন্তোষকেই আরও উসকে দেয়। তাঁর এই অনুভূতি কেবল ব্যক্তিগত শোকের প্রকাশ নয়, বরং সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি এক নীরব কিন্তু জোরালো প্রতিবাদ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে, যা অনেক সাধারণ মানুষের অব্যক্ত বেদনাকে ভাষা দিয়েছে।

    বিনোদন অঙ্গন ও ভক্তদের শোক ও সমবেদনা

    মৌসুমী হামিদের এই মর্মস্পর্শী পোস্টটি তাঁর অনুরাগী এবং সহকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ব্যক্তিগত এই শোকের মুহূর্তে অসংখ্য ভক্ত তাঁর পোস্টে এসে সমবেদনা জানিয়েছেন। বিনোদন জগতের সহকর্মীরাও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, শোকপ্রকাশ করেছেন এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। বিশিষ্ট অভিনেতা রওনক হাসান, আহসান হাবিব নাসিমসহ আরও অনেকে এই শোকবার্তায় অংশ নিয়েছেন, যা মৌসুমী হামিদের প্রতি তাঁদের গভীর শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করে। এই সমর্থন মৌসুমী হামিদকে তাঁর কঠিন সময়ে কিছুটা হলেও মানসিক শক্তি যোগাতে সাহায্য করেছে, যেখানে তিনি ব্যক্তিগত ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একটি বৃহত্তর সামাজিক অসঙ্গতির দিকে আলোকপাত করার সাহস দেখিয়েছেন। তাঁর এই সাহসী এবং আবেগঘন প্রকাশনা বিনোদন অঙ্গনে শুধু এক অভিনেত্রীর ব্যক্তিগত শোক হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে নতুন করে ভাবনার জন্ম দিয়েছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here