More

    জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি

    বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ প্রিয়ন্তী উর্বী তাঁর ব্যতিক্রমী অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি একাধিক নতুন নাটকে কাজ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন, যা তাঁর অভিনয় জীবনের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করছে। তাঁর সাম্প্রতিক কাজগুলো নিয়ে এক আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর অভিজ্ঞতা ও ভাবনাগুলো। বিশেষ করে আলোচিত নাটক ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’-এর গল্প ও তাঁর অভিনীত চরিত্র নিয়ে তিনি বিস্তারিত জানিয়েছেন, যা দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ তৈরি করেছে।

    ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ – এক অভূতপূর্ব গল্পের হাতছানি

    আলোচিত নাটক ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’-এর গল্প প্রিয়ন্তীর মনে এতটাই গভীর ছাপ ফেলেছে যে, এটি তাঁকে রীতিমতো মুগ্ধ করেছে। নাটকের লেখক প্রীতম যখন তাঁকে গল্পটি পাঠান, প্রিয়ন্তী তখন একটি শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। গভীর রাতে কাজ শেষে বাসায় ফিরে তিনি ভেবেছিলেন, গল্পের দু-চার পাতা পড়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। কিন্তু গল্পের বুনন এতটাই আকর্ষণীয় ছিল যে, দু-চার পাতা পড়তে গিয়ে কখন যে রাতের সাড়ে ৪টা বেজে গেছে, তা তিনি টেরই পাননি। ৩০ পৃষ্ঠার পুরো গল্পটি এক বসায় শেষ করে ফেলেছিলেন।

    এই বিষয়ে প্রিয়ন্তী স্মৃতিচারণ করে বলেন, “গল্পটা পড়ার পর আমার আক্ষরিক অর্থেই ‘গুজবাম্পস’ (গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা) হয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই আমি প্রীতম ভাইয়াকে নক করে জিজ্ঞাসা করি, ‘আপনি এটা কী গল্প লিখেছেন? এত সুন্দর গল্প, আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি!’।” সেই মুহূর্ত থেকেই গল্পটি তাঁর মনোজগতে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তিনি এটিকে ‘অদ্ভুত’ এবং ‘যুক্তিহীনভাবে আকর্ষণীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন। নাটকের প্রোমো, টিজার বা ট্রেলার দেখেও গল্পের মূল বিষয়বস্তু বোঝা প্রায় অসম্ভব, যা দর্শকদের মধ্যে এক গভীর রহস্যময়তা ও কৌতূহল তৈরি করেছে। এই রহস্যই নাটকটিকে অনন্য মাত্রা দিয়েছে এবং দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে।

    মনস্তাত্ত্বিকের জটিল চরিত্র রূপায়ণ

    ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ নাটকে প্রিয়ন্তী উর্বী একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন – তিনি একজন সাইকোলজিস্ট বা মনোবিজ্ঞানী। এই চরিত্রে তাঁর জীবনের দুটি ভিন্ন পর্যায় তুলে ধরা হয়েছে, যা চরিত্রটিতে গভীরতা যোগ করেছে। চরিত্রটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রিয়ন্তী জানান, তাঁর চরিত্রটি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং আত্মমর্যাদাশীল। সে নিজেকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় এবং নিজের বিশ্বাস ও যুক্তির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আশেপাশের কারও মতামত বা কথায় সে কান দেয় না, যা চরিত্রটিকে আরও স্বাধীনচেতা ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছে। একজন মনোবিজ্ঞানীর প্রজ্ঞা এবং আত্মকেন্দ্রিকতার এই সংমিশ্রণ চরিত্রটিকে বেশ ভিন্ন এক মেজাজ দিয়েছে, যা প্রিয়ন্তীর অভিনয় নৈপুণ্যের মধ্য দিয়ে পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    ‘ভাবিয়া করিও কাজ’ ও ‘তাহার মায়া’ – ভিন্নধারার দুটি গল্প

    নিজের অন্যান্য সাম্প্রতিক কাজগুলো নিয়েও উচ্ছ্বসিত প্রিয়ন্তী উর্বী। ‘ভাবিয়া করিও কাজ’ এবং ‘তাহার মায়া’—এই দুটি নাটকের গল্পও তাঁর মতে বেশ ব্যতিক্রমী এবং আকর্ষণীয়।

    ‘ভাবিয়া করিও কাজ’

    ‘ভাবিয়া করিও কাজ’ নাটকে প্রিয়ন্তীর সঙ্গে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা আরশ খান। নাটকটি পরিচালনা করেছেন প্রতিভাবান নির্মাতা রাইসুল তমাল। এই নাটকে প্রিয়ন্তীকে একজন কলেজ শিক্ষার্থীর চরিত্রে দেখা গেছে, যিনি জীবন চলার পথে একটি ভুল করে ফেলেন। সেই ভুল এবং তার পরিণতি নিয়েই নাটকের মূল গল্প আবর্তিত হয়েছে। প্রিয়ন্তী বিশেষত রাইসুল তমাল এবং আরশ খানের সঙ্গে তাঁর জুটিকে অত্যন্ত সফল বলে মনে করেন। তাদের এই ত্রয়ী এর আগেও একসঙ্গে কাজ করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, তাদের অভিনীত আরেকটি নাটক ‘পাখি গো নাম ধরে ডাকো’ মাত্র এক মাসেই রেকর্ড ১১ মিলিয়ন ভিউ অর্জন করেছে। এই সাফল্যের ধারা ‘ভাবিয়া করিও কাজ’ নাটকেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।

    ‘তাহার মায়া’

    অপরদিকে, ‘তাহার মায়া’ নাটকের গল্পকেও প্রিয়ন্তী ‘অত্যন্ত সুন্দর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই নাটকে তাঁর বিপরীতে দেখা যাবে পার্থ শেখকে, এবং এর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন প্রত্যয় (আরমান রহমান)। নাটকটির গল্প বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। প্রিয়ন্তীর চরিত্রটি এখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যিনি বিভিন্ন সংকট ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। সেই সংকটময় মুহূর্তে পার্থ শেখ অভিনীত চরিত্রটি তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবন, তাদের চ্যালেঞ্জ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার এক মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প এটি।

    একাধিক ভিন্নধারার চরিত্রে অভিনয় এবং আকর্ষণীয় গল্পের নাটকের অংশীদার হয়ে প্রিয়ন্তী উর্বী তাঁর অভিনয় জীবনকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর প্রতিটি কাজই দর্শকদের নতুন কিছু দেওয়ার বার্তা বহন করে এবং তাঁকে বাংলা নাটকের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here