বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় রং উৎপাদন ও বাজারজাতকারী বহুজাতিক কোম্পানি বার্জার পেইন্টস লিমিটেড চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) তাদের ব্যবসায়িক আয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে, এই ইতিবাচক আয় বৃদ্ধির বিপরীতে কোম্পানিটির নিট মুনাফায় কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা মূলত উৎপাদন ব্যয় ও কর বাবদ খরচ বৃদ্ধির কারণে ঘটেছে। কোম্পানিটি তাদের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের সামগ্রিক আর্থিক চিত্র উঠে এসেছে।
বিক্রয় আয়ের প্রবৃদ্ধি: চ্যালেঞ্জের মাঝেও গতিশীলতা
গত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ছয় মাসের সময়কালে বার্জার পেইন্টস লিমিটেড মোট ১ হাজার ৩১০ কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করেছে। এই পরিসংখ্যান গত বছরের একই সময়ের (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) তুলনায় একটি সুস্পষ্ট অগ্রগতি নির্দেশ করে, যখন কোম্পানিটির মোট আয় ছিল ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক আয় ৪৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শতাংশের হিসাবে প্রায় ৩.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই প্রবৃদ্ধি বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং স্থানীয় বাজারের প্রতিযোগিতার মাঝেও কোম্পানিটির শক্তিশালী অবস্থান এবং কার্যকর বাজার কৌশলের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মুনাফায় নিম্নমুখিতা: উচ্চ উৎপাদন খরচের প্রভাব
তবে, আয় বৃদ্ধি পেলেও উল্লেখিত সময়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে। চলতি ছয় মাসে বার্জার পেইন্টসের অর্জিত মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৪৬ কোটি টাকায়, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা। এই হিসাবে, কোম্পানিটির মুনাফায় ৭ কোটি টাকার একটি সুস্পষ্ট পতন লক্ষ্য করা গেছে। এই মুনাফা কমার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে উৎপাদন খরচ এবং কর বাবদ ব্যয়ের বৃদ্ধি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
খরচ বিশ্লেষণ: উৎপাদন ব্যয় বনাম পরিচালন ব্যয়
বার্জার পেইন্টসের এই মুনাফা হ্রাসের মূল কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে আয়ের চেয়েও বেশি হারে। চলতি বছরের ছয় মাসে ১ হাজার ৩১০ কোটি টাকার মোট ব্যবসার বিপরীতে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ৯০০ কোটি টাকায়। গত বছরের একই সময়ে, ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার ব্যবসার জন্য উৎপাদন ব্যয় ছিল ৮৫২ কোটি টাকা। এই তুলনামূলক চিত্র থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, যেখানে কোম্পানির ব্যবসা বেড়েছে ৪৫ কোটি টাকা, সেখানে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বিক্রয় বৃদ্ধি যতটা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়, যা নিট মুনাফার ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অন্যদিকে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কোম্পানিটি তাদের পরিচালন ব্যয়ের ওপর সফলভাবে লাগাম টানতে সক্ষম হয়েছে, যা মুনাফায় আরও বড় পতন রোধ করেছে। চলতি এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা, পণ্য বিক্রি, সরবরাহসহ পরিচালন খরচ বাবদ কোম্পানিটি ব্যয় করেছে ২১৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই খরচ ছিল ২২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় পরিচালন বাবদ খরচ ৭ কোটি টাকা কম ছিল। পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারার এই সক্ষমতা কোম্পানির সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি ইতিবাচক দিক তুলে ধরে। এছাড়াও, কর বাবদ খরচ বৃদ্ধিও নিট মুনাফা হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
