More

    বিশ্ববাজারে আবার কমেছে সোনার দাম, আগামী এক মাস কেমন থাকবে দাম

    আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার মূল্যে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা পতন লক্ষ্য করা গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন দেশের মুদ্রানীতির প্রভাবের কারণে মূল্যবান এই ধাতুর দাম ওঠানামা করছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে সোনার দাম আরও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, তবে বাজার বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন যে আগামী দিনগুলোতে এর দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই অবস্থান করবে।

    বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক প্রবণতা

    গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুযায়ী গত সোমবার প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩৩ ডলার কমেছে। এই হ্রাস সত্ত্বেও, চলতি বছর ধরে সোনার দামের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল, তার রেশ এখনও বিদ্যমান। দীর্ঘ সময় ধরে অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধির পর সম্প্রতি দাম কিছুটা কমে এলেও, বর্তমানে প্রতি আউন্স সোনার দাম এখনও ৪ হাজার ডলারের উপরে অবস্থান করছে। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী, গত রবিবার রাত ১১টায় প্রতি আউন্স সোনার বাজারমূল্য ছিল ৪ হাজার ৫০ ডলার ৪৩ সেন্ট

    মূল্য কমার নেপথ্যে কারণ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সূচক

    বাজার বিশ্লেষকরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকের উপর সতর্কতার সাথে নজর রাখছেন, যা সোনার ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণে সহায়ক হবে। তাঁদের মতে, সোনার দাম সীমিত পরিসরের মধ্যে ওঠানামা করার কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে:

    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

    প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিনের শাটডাউনের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব কী দাঁড়ায়, সেদিকে বিনিয়োগকারীদের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে। দেশটির মূল্যস্ফীতির হার এবং মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি সোনার মূল্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সাধারণত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়লে সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে শক্তিশালী অর্থনীতিতে এর আবেদন কিছুটা কমতে পারে।

    ফেডারেল রিজার্ভের মুদ্রানীতি ও সুদের হার

    সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি বাজারকে প্রভাবিত করছে তা হলো ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) নীতি সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। ডিসেম্বরে ফেডের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই বৈঠকের আগে, অর্থাৎ আগামী এক মাসের মধ্যে সোনার দামে খুব বেশি বড় ধরনের ওঠানামা দেখা যাবে না। ফেড যদি সুদের হার বৃদ্ধি করে, তাহলে ডলার শক্তিশালী হয় এবং সোনা বিনিয়োগের আকর্ষণ কিছুটা হারায়, কারণ সুদের হারযুক্ত অন্যান্য সম্পদে রিটার্ন বেশি পাওয়া যায়।

    ফেডের সিদ্ধান্তের জন্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সূচক

    ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহারের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা নির্ধারণের জন্য আরও কিছু অর্থনৈতিক সূচক গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাপ্তাহিক কর্মসংস্থানের হার, ভোক্তাদের সামগ্রিক আত্মবিশ্বাস এবং উৎপাদনবহির্ভূত খাতের পিএমআই (পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স)। এই সূচকগুলো মার্কিন অর্থনীতির সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে, যা ফেডের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে ডিসেম্বরে ফেডের নীতি সুদহার ঘোষণার আগ পর্যন্ত সোনার দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে।

    ডলারের বিনিময় হারের প্রভাব

    সোনার মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ডলারের বিনিময় হার। সাধারণত, ডলার শক্তিশালী হলে সোনার দামের ওপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি হয়, কারণ ডলার-নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য সোনা তখন অধিক ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে, ফলে চাহিদা কমে। বর্তমানে ডলারের বিনিময় হারের ওঠানামাও সোনার দামের স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখছে।

    ভবিষ্যৎ গতিপথ ও বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস

    সামগ্রিক অর্থনৈতিক সূচক এবং ফেডারেল রিজার্ভের আসন্ন বৈঠকের দিকে তাকিয়ে, বাজার বিশ্লেষকরা আপাতত সোনার দামে বড় ধরনের অস্থিরতা আশা করছেন না। তাঁদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, স্বল্প মেয়াদে সোনার দাম একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করবে এবং ডিসেম্বরের প্রথম দিক পর্যন্ত এর স্থিতিশীলতা বজায় থাকতে পারে, যতক্ষণ না ফেডের মুদ্রানীতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষিত হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here