বাংলাদেশের কর্মচঞ্চল করপোরেট অঙ্গনে নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ সি-স্যুট অ্যাওয়ার্ডস। দেশের শীর্ষস্থানীয় ২৪ জন করপোরেট ব্যক্তিত্ব তাঁদের অসামান্য অবদান ও দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্য এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এই স্বীকৃতি শুধুমাত্র তাঁদের ব্যক্তিগত সাফল্যের পরিচায়ক নয়, বরং দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে তাঁদের ইতিবাচক প্রভাবেরও প্রতীক, যা তাঁদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
গত শনিবার, রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এই ব্যতিক্রমী ও উচ্চমানের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, যা দেশের করপোরেট নেতৃত্বকে সম্মানিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আগামী দিনের কর্পোরেট কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্বগণ
এই বছর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২০২৫ সালের সেরা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শ্রেণিতে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি লাভ করেছেন সিটি ব্যাংকের সম্মানিত এমডি ও সিইও, মাসরুর আরেফিন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব ব্যাংকটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এবং আর্থিক খাতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
অন্যদিকে, বর্ষসেরা প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা বা ব্যবসায় পরিচালক শ্রেণিতে সম্মাননা অর্জন করেছেন দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তাঁরা হলেন: প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মইনুল ইসলাম এবং নেস্লে বাংলাদেশের পরিচালক এ এস এম হাফিজুল ইসলাম। ব্যবসা পরিচালনায় তাঁদের প্রজ্ঞা, কৌশলগত পরিকল্পনা ও দক্ষতা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক অগ্রগতিতে বিশেষভাবে কার্যকর।
বিপণন জগতে অসামান্য অবদানের জন্য বর্ষসেরা প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) শ্রেণিতে পুরস্কৃত হয়েছেন গ্রামীণফোনের সিএমও ফারাহ নাজ জামান এবং মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কাজী মো. মহিউদ্দিন। তাঁদের উদ্ভাবনী বিপণন কৌশল এবং বাজার বিশ্লেষণের গভীরতা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে এবং গ্রাহক engagement বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
বর্ষসেরা প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিও) হিসেবে ভূষিত হয়েছেন ওয়ালটন হাই–টেক ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ আলম। তাঁর শক্তিশালী বাণিজ্যিক নেতৃত্ব ও বাজার সম্প্রসারণে তাঁর প্রচেষ্টা ওয়ালটনের সাফল্যের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত।
বার্ষিক আয়ের ভিত্তিতেও সেরা এমডি বা সিইওদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা তাদের আর্থিক সাফল্যের পরিচায়ক। ১০০ থেকে ৪৯৯ কোটি টাকা আয় করা প্রতিষ্ঠানের বর্ষসেরা এমডি বা সিইও শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এমডি রিজওয়ান দাউদ শামস। একইভাবে, ১০০ কোটি টাকার কম আয় করা প্রতিষ্ঠানের বর্ষসেরা সিইও হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন ওয়ালটন মাইক্রো–টেক করপোরেশনের সিইও নিশাত তাসনিম শুচি। এই দুই ক্যাটাগরির পুরস্কার প্রতিষ্ঠানের আকার নির্বিশেষে নেতৃত্বের গুণাগুণকে তুলে ধরেছে।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় যারা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন, সেই বর্ষসেরা প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা (সিএইচআরএ) শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছেন ট্রান্সকম গ্রুপের করপোরেট হেড অব এইচআর ও পরিচালক এম সাব্বির আলী এবং আকিজবশির গ্রুপের পরিচালক দিলরুবা শারমীন খান। কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাঁদের অবদান উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও, বর্ষসেরা করপোরেট বিষয়ক কর্মকর্তা (সিসিএও) শ্রেণিতে পুরস্কৃত হয়েছেন গ্রামীণফোনের সিসিএও তানভীর মোহাম্মদ। এই সম্মাননাগুলো বাংলাদেশের করপোরেট সেক্টরের বৈচিত্র্যময় নেতৃত্ব এবং তাঁদের নিরলস পরিশ্রমের প্রতিচ্ছবি, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।