বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বরাবরই এক অবিচ্ছেদ্য ও চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণে এই অর্থের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেশের অর্থনৈতিক দিগন্তে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ২১ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে এক উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখা গেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সুখবরটি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা প্রবাসীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দেশের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসারই প্রতিচ্ছবি।
অক্টোবরের প্রথম ২১ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড বৃদ্ধি
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ২১ দিনে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অংক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চোখ ধাঁধানো ৮.১ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য এক অত্যন্ত সুসংবাদ। গত বছর এই একই ২১ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৭১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বর্ধিত প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করতে, আমদানি ব্যয় মেটাতে এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি বিশ্ব অর্থনীতির চলমান প্রতিকূলতার মাঝেও বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা প্রমাণ করে।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি
কেবল অক্টোবরের চিত্রই নয়, চলতি অর্থবছরের সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর শুরু হওয়ার পর, অর্থাৎ জুলাই মাস থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসীরা সর্বমোট ৯ হাজার ৪৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় একটি প্রশংসনীয় অগ্রগতি। পূর্ববর্তী অর্থবছরে এই একই সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানকে আরও স্পষ্ট করে তোলে এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ সুগম করে। বিদেশে কর্মরত লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশির কষ্টার্জিত এই অর্থ দেশের প্রতিটি পরিবার, গ্রাম এবং জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করছে।
