More

    ‘কার্গো ভিলেজে আগুন পোশাক ‎শিল্পের জন্য বড় ক্ষতি’

    ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে, বিশেষ করে পোশাক শিল্প খাতে এক বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগকে পোশাক শিল্পের জন্য একটি ‘বড় ধরনের ক্ষতি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব এনামুল হক খান বাবলু। তার মতে, এই অগ্নিকাণ্ড দেশের সামগ্রিক রপ্তানি চিত্র এবং ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।

    বিজিএমইএ’র গভীর উদ্বেগ ও ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ

    অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে বিজিএমইএ-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি এনামুল হক খান বাবলু জানান, এই অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ে বিজিএমইএ বোর্ড গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় দেশের রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে পোশাক শিল্প ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।” রবিবার দুপুরে বিমানবন্দরের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ৮ নম্বর গেটের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব মন্তব্য করেন। তার বক্তব্যে ক্ষতির ব্যাপকতা এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে বিশদ আলোকপাত করা হয়।

    জনাব এনামুল হক আরও ব্যাখ্যা করেন যে, সাধারণত উচ্চমূল্যের পণ্য (হাই-ভ্যালুড প্রোডাক্ট) এবং জরুরি শিপমেন্টের জন্য নির্ধারিত পণ্যগুলোই আকাশপথে কার্গো ভিলেজের মাধ্যমে জাহাজীকরণ করা হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে ঠিক এমন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যসামগ্রীই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধ্বংস হওয়া মালামালের মধ্যে ছিল:

    • রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত পোশাক: চূড়ান্ত প্রক্রিয়াকরণের পর বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা পোশাকের বিপুল সংগ্রহ।
    • মূল্যবান কাঁচামাল: পোশাক তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় বহু মূল্যবান কাঁচামাল, যা সাধারণত বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় এবং যার সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
    • গুরুত্বপূর্ণ নমুনা পণ্য (স্যাম্পল): সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রচুর পরিমাণে নমুনা পণ্য (স্যাম্পল) এই অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়েছে। এই স্যাম্পলগুলো সরাসরি নতুন ব্যবসার পথ উন্মোচন করে এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্টের জন্য অপরিহার্য। এই নমুনা পণ্যগুলোর বিনাশ কেবল বর্তমান ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের নতুন ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন এবং বাজার সম্প্রসারণের পথে এক বিশাল প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, যা সামগ্রিক শিল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ।

    ক্ষতি নিরূপণে বিজিএমইএ’র তৎপরতা

    ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিজিএমইএ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। এনামুল হক জানান, “আমরা ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ ও তথ্য সংগ্রহের আপ্রাণ চেষ্টা করছি।” এই লক্ষ্যে, বিজিএমইএ তাদের সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানকে একটি নির্ধারিত ফরমেটে ক্ষতি হওয়া পণ্যের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। দ্রুত এবং কার্যকরভাবে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন ডাটা কালেকশন পোর্টালও চালু করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে বিজিএমইএ তার সদস্যদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সম্ভাব্য সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

    পোশাক শিল্পের এই অভিজ্ঞ নেতা আরও বলেন, “আমাদের সদস্যরা প্রায় সবাই আকাশপথে পণ্য পাঠান। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০-২৫০টি কারখানার পণ্য আকাশপথে রপ্তানি হয়।” এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষতির পরিমাণ অত্যন্ত ব্যাপক হতে পারে এবং এর প্রভাব বহু সংখ্যক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর পড়বে। সংগৃহীত সমস্ত তথ্য-উপাত্ত দ্রুত বিশ্লেষণ করে বিজিএমইএ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি দপ্তরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। এই সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষতির সম্ভাব্য সমাধান এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও নিরাপদ ব্যবস্থার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। এই অগ্নিকাণ্ড বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য এক বড় শিক্ষা এবং ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here