শারদীয় দুর্গাপূজার মহালগ্নে দেশজুড়ে যখন উৎসবের আমেজ, তখন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দেখা গেছে এক ভিন্ন চিত্র। সংক্ষিপ্ত কর্মদিবসের চলতি সপ্তাহে লেনদেনের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, উৎসবের ছুটি সত্ত্বেও বাজার তার ইতিবাচক গতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। দুটি সরকারি ছুটির কারণে এই সপ্তাহে পুঁজিবাজার মাত্র তিন কার্যদিবস খোলা ছিল, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম। তবে, এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাজারের প্রধান সূচক এবং বাজার মূলধনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
পুঁজিবাজারের সংক্ষিপ্ত লেনদেন ও সামগ্রিক চিত্র
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকছে। এই অনিবার্য ছুটির কারণে চলতি সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারগুলোতে মাত্র তিনটি কার্যদিবসের জন্য কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এই সীমিত লেনদেনের মধ্যেও বাজারের চিত্র ছিল আশাব্যঞ্জক। সপ্তাহের মোট তিনটি কার্যদিবসের মধ্যে দুদিনই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় ছিল, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থা ফিরিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, উভয় পুঁজিবাজারের প্রধান সূচকগুলো এবং বাজার মূলধন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্বল্পমেয়াদী বাজারের স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত বহন করে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বৃদ্ধি
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এই তিন কার্যদিবসে বাজার মূলধনে এক বিশাল সংযোজন পরিলক্ষিত হয়েছে। মোট ১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকারও বেশি বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়ে ডিএসই তার আর্থিক ভিত্তি আরও সুদৃঢ় করেছে। এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বাজারের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং তারল্যের উন্নতির স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।
প্রধান সূচকগুলোর উত্থান-পতন: ডিএসইএক্স, ডিএসইএস ও ডিএসই-৩০
বাজার বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের শেষ দিকে ডিএসইএক্স, যা ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক, ৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) লেনদেন সমাপ্তির পর এটি ১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এই সামান্য বৃদ্ধি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিতবাহী, যা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বাজারকে ইতিবাচক দিকে চালিত করেছে।
অন্যান্য সূচকগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ডিএসই শরীয়াহ সূচক (ডিএসইএস) গত বৃহস্পতিবার ১ হাজার ১৭২ পয়েন্টে ছিল। এই সপ্তাহে এটি তার ১ হাজার ১৭২ পয়েন্টের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা শরীয়াহ-ভিত্তিক বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল বার্তা বহন করে। যদিও এটি সরাসরি বৃদ্ধি না হলেও, বাজার অস্থিরতার মধ্যেও এই সূচকের অটল অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে, ডিএসইর বাছাই করা ৩০টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির শেয়ার নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। এই সূচকটি আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে ২১ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ২ হাজার ৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। গত বৃহস্পতিবার এর অবস্থান ছিল ২ হাজার ১০৩ পয়েন্টে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, বাজারের বৃহৎ ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্য কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে, যা বাজারের নির্দিষ্ট কিছু খাতে দুর্বলতার পরিচায়ক হতে পারে।
লেনদেন পরিস্থিতি: গড় ও মোট লেনদেনের বিশ্লেষণ
চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ৬.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৬২০ কোটি ১১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত সপ্তাহের দৈনিক গড় লেনদেন ৫৮৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেয়ে বেশ খানিকটা বেশি। লেনদেন বৃদ্ধির এই প্রবণতা বাজারের গতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের পরিচায়ক, যা বাজারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তোলে।
তবে, মোট লেনদেনের দিকে তাকালে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। এই সপ্তাহের তিন কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৬০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কার্যদিবস কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মোট লেনদেনের পরিমাণ কমে এসেছে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে দৈনিক গড় লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারের মৌলিক শক্তি অটুট রয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অটুট আছে বলে প্রতীয়মান হয়। এটি প্রমাণ করে যে, সুযোগ পেলেই বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত।
