More

    অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে রেকর্ড রাজস্ব আদায়

    জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্থাপন করেছে। সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত, রাজস্ব আদায়ে এক নজিরবিহীন সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এই অর্জন কেবল বর্তমান সরকারের আর্থিক সক্ষমতারই পরিচায়ক নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি সুদৃঢ় ভিত্তিও তৈরি করেছে।

    এনবিআর কর্তৃক প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই তিন মাসে অর্জিত মোট রাজস্বের পরিমাণ দেশের রাজস্ব ইতিহাসে যেকোনো অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় সর্বোচ্চ। এই প্রবৃদ্ধি জাতীয় অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    সামগ্রিক রাজস্ব আদায় ও প্রবৃদ্ধি: এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত

    ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯০ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। এই পরিসংখ্যান শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং সরকারের কার্যকর আর্থিক নীতি এবং রাজস্ব আদায় ব্যবস্থার দক্ষতার এক উজ্জ্বল প্রতিফলন।

    বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বর্তমান অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত বছরের তুলনায় অতিরিক্ত ১৫ হাজার ২৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় একটি ব্যাপক উল্লম্ফন নির্দেশ করে। এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।

    ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: রাজস্ব আহরণের তুলনামূলক চিত্র

    এনবিআর-এর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত অর্থবছরগুলোতে প্রথম তিন মাসের রাজস্ব আদায়ের চিত্র নিম্নরূপ ছিল:

    • ২০২৪-২৫ অর্থবছরে: ৭৫ হাজার ৫৫৪ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা
    • ২০২৩-২৪ অর্থবছরে: ৭৬ হাজার ৬৮ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা
    • ২০২২-২৩ অর্থবছরে: ৬৮ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা

    এই তুলনামূলক চিত্র স্পষ্ট করে তোলে যে, বর্তমান অর্থবছরের ৯৯ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার সংগ্রহ একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড, যা পূর্ববর্তী যেকোনো বছরের একই সময়ের সংগ্রহকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চলমান ধারাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

    খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ: রাজস্ব আদায়ে নতুন রেকর্ড

    জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫ প্রান্তিকে দেশের তিনটি প্রধান রাজস্ব সংগ্রহ খাত – স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট, আয়কর ও ভ্রমণ কর এবং আমদানি-রপ্তানি – প্রতিটিই নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এই খাতগুলোর সমন্বিত বৃদ্ধি সার্বিক রাজস্ব আহরণে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

    স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট: সর্বোচ্চ অবদানকারী

    স্থানীয় পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) খাত থেকে সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা রাজস্ব সংগৃহীত হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের ২৬ হাজার ৮৩৮ দশমিক ৪৯ কোটি টাকার তুলনায় ২৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি, যা এই খাতের অসামান্য প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। ভ্যাট আদায়ে এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য সরকারের ভ্যাট ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং পরিপালন বৃদ্ধিতে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সুফল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

    বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় ভ্যাট আদায়ের চিত্র ছিল:

    • ২০২৩-২৪ অর্থবছরে: ২৮ হাজার ৪৪৫ দশমিক ৪১ কোটি টাকা
    • ২০২২-২৩ অর্থবছরে: ২৪ হাজার ৫৪৬ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা

    এই তথ্য ভ্যাট খাতে ধারাবাহিক ও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির প্রবণতা তুলে ধরে।

    আয়কর ও ভ্রমণ কর: উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি

    আয়কর ও ভ্রমণ কর খাত থেকে ২৮ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের ২৪ হাজার ৮০ দশমিক ৮২ কোটি টাকার তুলনায় এই খাতে ১৮ দশমিক ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, কর পরিপালনের প্রতি মনোযোগ এবং আধুনিক কর ব্যবস্থার প্রবর্তন এই খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভে সহায়তা করেছে।

    আমদানি-রপ্তানি শুল্ক: স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি

    আমদানি ও রপ্তানি বিভাগ থেকে ২৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। গত বছর একই সময়ে এই খাতের সংগ্রহ ছিল ২৪ হাজার ৬২৫ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা। বৈদেশিক বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা ও বৃদ্ধি এই খাতে রাজস্ব আদায়ে সकारात्मक প্রভাব ফেলেছে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

    জাতীয় অর্থনীতির উপর প্রভাব ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

    জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এই অভূতপূর্ব সাফল্য দেশের অর্থনীতিতে একটি নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করেছে। এটি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি এবং অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের উৎস হিসেবে কাজ করবে। রাজস্ব আদায়ে এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেশের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আগামী দিনগুলোতেও এনবিআর এই অগ্রযাত্রাকে ধরে রেখে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও শক্তিশালী অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here