More

    বিক্রি বেড়েছে টয়োটার ‘করোলা ক্রস’ গাড়ির, কেন এত আগ্রহ

    বাংলাদেশের সড়কপথে জাপানি গাড়ি নির্মাতা টয়োটা (Toyota) ব্র্যান্ডের একচ্ছত্র আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত। সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ, সহজলভ্য সার্ভিসিং এবং তুলনামূলক কম রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের কারণে টয়োটা দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের গাড়ির বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে টিকে আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই চিরচেনা দৃশ্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে টয়োটার স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল (SUV) মডেল, করোলা ক্রস। হাইব্রিড প্রযুক্তির সমন্বয়ে নির্মিত এই গাড়িটি জ্বালানি সাশ্রয়ের দিক থেকে অসাধারণ পারফর্মেন্স দেখাচ্ছে, যা এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

    দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গাড়ির বাজারে টয়োটার অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ। এর যন্ত্রাংশের সহজলভ্যতা, বিশ্বস্ত আফটার-সেলস সার্ভিস এবং সার্বিকভাবে কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এটিকে দেশের ক্রেতাদের কাছে এক নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। টয়োটার সেডান মডেলগুলো, বিশেষত এলিয়ন (Allion) ও প্রিমিও (Premio), একসময় মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবার কাছেই ছিলো আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এবং বিশ্বব্যাপী গাড়ির প্রযুক্তিতে আসা পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের বাজারও পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের ধারায় সম্প্রতি টয়োটা ব্র্যান্ডের করোলা ক্রস এসইউভি মডেলটি দ্রুত গতিতে এর অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে। হাইব্রিড ইঞ্জিন চালিত হওয়ায় এর জ্বালানি দক্ষতা তুলনাহীন, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্রেতাদের কাছে এর আবেদন বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

    ঐতিহ্যবাহী সেডানের সাথে নতুন এসইউভি মডেলের প্রতিযোগিতা

    গাড়ির বাজার বিশ্লেষক ও বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এক সময় দেশের বাজারে টয়োটা ব্র্যান্ডের এলিয়নপ্রিমিও মডেলের সেডান গাড়ির প্রতি ক্রেতাদের প্রবল আগ্রহ ছিল। এই মডেলগুলোর মসৃণ রাইড, নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স এবং সামাজিক মর্যাদা ছিল অদ্বিতীয়। তবে, ২০২১ সাল থেকে জাপানে এই দুটি মডেলের উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে, পুরোনো বা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজারে এদের উচ্চ চাহিদা থাকলেও সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়েছে, যা দামের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে একটি প্রিমিও মডেলের গাড়ির জন্য ক্রেতাদের প্রায় ৪৫ থেকে ৪৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, তুলনামূলকভাবে কম দামে নতুন প্রযুক্তির করোলা ক্রস এসইউভি বাজারে আসাটা ক্রেতাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প তৈরি করেছে। এর মধ্য দিয়ে সেডান গাড়ির ঐতিহ্যবাহী আকর্ষণ এবং আধুনিক এসইউভি’র ব্যবহারিক সুবিধার মধ্যে একটি নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

    এসইউভি (SUV) গাড়িগুলো তাদের উচ্চ গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, শক্তিশালী উপস্থিতি এবং বহুমুখী ব্যবহারের জন্য পরিচিত। এদেরকে প্রায়শই জিপ গাড়ির সাথে তুলনা করা হয়। কর্দমাক্ত রাস্তা, ভাঙাচোরা পথ কিংবা দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য এসইউভি’র আরাম ও নির্ভরযোগ্যতা অনবদ্য। এই কারণে, বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে রাস্তাঘাটের অবস্থা প্রায়শই প্রতিকূল থাকে, সেখানে এসইউভি’র কদর ক্রমাগত বাড়ছে।

    জ্বালানি সাশ্রয়ে অনবদ্য: করোলা ক্রসের হাইব্রিড সুবিধা

    গাড়ির বাজারে করোলা ক্রসের দ্রুত উত্থানের অন্যতম প্রধান কারণ হলো এর অসাধারণ জ্বালানি দক্ষতা। এর হাইব্রিড ইঞ্জিন প্রযুক্তি পেট্রোলের পাশাপাশি বিদ্যুতের সাহায্যে চলে, যা সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনে। সাধারণত, এসইউভি ধরণের গাড়ির দাম অন্যান্য সেডান গাড়ির চেয়ে বেশি হয়, ফলে অনেকেরই এমন গাড়ি কেনার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু করোলা ক্রসের তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্য এবং নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স, এসইউভি প্রেমীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি কেবল গাড়ির মালিকানা স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করছে না, বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিচালন ব্যয়ও সাশ্রয় করছে।

    করোলা ক্রস ব্যবহারকারী একাধিক গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কে এই গাড়ি প্রতি লিটার জ্বালানিতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ অতিক্রম করতে সক্ষম, যা একটি এসইউভি গাড়ির জন্য অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অন্যদিকে, শহরের যানজটপূর্ণ রাস্তায় এটি প্রতি লিটারে প্রায় ১৭ কিলোমিটার মাইলেজ দেয়। এই পরিসংখ্যানগুলো নির্দেশ করে যে, দৈনন্দিন যাতায়াত বা দীর্ঘ ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোলা ক্রস একটি অত্যন্ত অর্থনৈতিক পছন্দ হতে পারে। জ্বালানি সাশ্রয়ের এই সুবিধা বর্তমান বৈশ্বিক জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ক্রেতাদের জন্য এটিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

    গ্রাহকের অভিজ্ঞতা: নির্ভরযোগ্যতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের সমন্বয়

    রাজধানীর মিরপুরের স্বনামধন্য আইনজীবী সোহেল রানা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি টয়োটা করোলা ক্রস গাড়ি ক্রয় করেন। এর আগে তিনি টয়োটার জনপ্রিয় এক্স করোলা মডেলের গাড়ি ব্যবহার করতেন। পুরনো গাড়ি থেকে নতুন করোলা ক্রসে আপগ্রেড করার পর তার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত ইতিবাচক। সোহেল রানা প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, “এই গাড়িতে একটি ৩৬ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক রয়েছে, যা একবার সম্পূর্ণ ভর্তি করলে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে চালানো সম্ভব। এটি দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “গাড়ির ভেতরের প্রশস্ততা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি, যা যাত্রী ও চালক উভয়ের জন্যই আরামদায়ক। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে পরিবার নিয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এটি অতুলনীয় স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে।”

    সোহেল রানার মতো আরও অনেক ক্রেতা করোলা ক্রসের উন্নত পারফরম্যান্স, অর্থনৈতিক জ্বালানি ব্যবহার এবং আরামদায়ক কেবিনের প্রশংসা করেছেন। এই মডেলটি কেবল একটি পরিবহনের মাধ্যম নয়, বরং আধুনিক প্রযুক্তি এবং ব্যবহারিক সুবিধার একটি সফল সমন্বয়, যা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গাড়ির বাজারে নতুন একটি মানদণ্ড স্থাপন করছে। এটি একদিকে যেমন টয়োটার বিশ্বস্ততা ধরে রাখছে, তেমনি অন্যদিকে ক্রেতাদের আধুনিক চাহিদা পূরণেও সক্ষম হচ্ছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here