More

    ব্যাংকের অ্যাপে লেনদেনে স্বাচ্ছন্দ্য, বাড়ছে গ্রাহক

    অদূর অতীতে ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণ মানেই ছিল এক দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। ব্যাংক হিসাব খোলা, তহবিল জমা দেওয়া, অর্থ স্থানান্তর কিংবা উত্তোলন — প্রতিটি সেবার জন্যই গ্রাহকদের সশরীরে ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হতে হতো। এর ফলে প্রায়শই দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো, যা ছিল এক বিরক্তির কারণ। তবে প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির কল্যাণে সেই চিত্র আজ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বর্তমানে, অধিকাংশ ব্যাংকিং কার্যক্রমই হাতের মুঠোয় চলে এসেছে; ঘরে বসেই গ্রাহকেরা নিজেদের পছন্দমতো সময়ে প্রায় সব ধরনের লেনদেন সম্পন্ন করতে পারছেন, যা একসময় ছিল কল্পনাতীত।

    ব্যাংকিং অ্যাপসের জয়যাত্রা ও গ্রাহক প্রবৃদ্ধি

    ডিজিটাল বিপ্লবের এই ধারায় গা ভাসিয়ে দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংকই চালু করেছে তাদের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। এই অ্যাপসগুলো ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যার ফলস্বরূপ গ্রাহক সংখ্যা এবং লেনদেনের পরিমাণ উভয়ই দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধি ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের অভাবনীয় সাফল্যের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, আধুনিক গ্রাহকেরা কতটা স্বাচ্ছন্দ্য এবং দক্ষতার সাথে এই নতুন পরিষেবা গ্রহণ করছেন।

    গ্রাহক ও ব্যাংকের দ্বিপাক্ষিক সুবিধা

    অ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বসে যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করার সুযোগ পাওয়ায় গ্রাহকেরা এখন নির্ভার ও স্বস্তিতে রয়েছেন। তাঁদের মূল্যবান সময় বাঁচছে, দূরত্বের বাধা ঘুচছে এবং শাখায় যাওয়ার শারীরিক ঝক্কি থেকে তাঁরা মুক্ত হচ্ছেন। একই সাথে, এই ডিজিটাল রূপান্তর ব্যাংকগুলোর জন্যও সুফল বয়ে এনেছে। শাখায় গ্রাহকের ভিড় কমা এবং কর্মীদের কম সম্পৃক্ততার কারণে ব্যাংকগুলোর পরিচালন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে। তবে, এখনো কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য গ্রাহকদের সশরীরে ব্যাংকের শাখায় উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হয়, যা ভবিষ্যতের ডিজিটাল অগ্রগতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

    সেবার বৈচিত্র্য ও সম্প্রসারণ: প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি

    অনেক ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) ব্যাংকিং এবং ইসলামী ব্যাংকিং-এর মতো বিশেষায়িত পরিষেবাগুলোকেও সংযুক্ত করেছে। এর পাশাপাশি, অ্যাপের মাধ্যমেই ঋণ গ্রহণের সুযোগও প্রদান করা হচ্ছে। যেসব ব্যাংক তাদের অ্যাপে নতুন নতুন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সেবা যুক্ত করতে সক্ষম হচ্ছে, তাদের গ্রাহক সংখ্যা ও লেনদেনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, গ্রাহকেরা কেবল মৌলিক লেনদেন নয়, বরং একটি সর্বব্যাপী ডিজিটাল ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা প্রত্যাশা করেন।

    শীর্ষস্থানীয় অ্যাপস ও তাদের পারফরম্যান্স

    দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অ্যাপ-ভিত্তিক গ্রাহক হিসাবের দিক থেকে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে বর্তমানে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। এর পরেই রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, যা নিজস্ব গ্রাহকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়া, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা এবং সিটি ব্যাংকের সিটিটাচ অ্যাপসগুলোও তাদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে এবং গ্রাহকদের ব্যাপক আস্থা অর্জন করেছে। লেনদেনের ক্ষেত্রেও নেক্সাস পে শীর্ষস্থানে রয়েছে, যার পরে যথাক্রমে আস্থা, সিটিটাচ এবং সেলফিন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। এই প্রতিযোগিতা গ্রাহকদের জন্য আরও উন্নত ও আধুনিক ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করছে।

    ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও ব্যাংকারদের অভিমত

    সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করেন, অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের পরিধি আরও বিস্তৃত করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। তাঁদের মতে, ক্ষুদ্র অঙ্কের ব্যবসায়িক লেনদেন এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের মতো বিষয়গুলো এখনো অ্যাপে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যার জন্য গ্রাহকদের এখনো ব্যাংকের শাখায় যেতে হয়। যদি এসব গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাও অ্যাপে যুক্ত করা যায়, তাহলে গ্রাহক সংখ্যা এবং লেনদেনের পরিমাণ আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে তাঁরা আশাবাদী। এই পদক্ষেপ ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও জনবান্ধব ও কার্যকর করে তুলবে।

    বর্তমানে, ব্যাংকগুলোর অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহকেরা সঞ্চয়ী ও স্থায়ী হিসাব খোলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধের সুবিধা পাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবা বিল; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন পরিশোধ; সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর ও বিল; ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ; ডিশ লাইন, টেলিফোন ও ইন্টারনেট বিল পরিশোধসহ অসংখ্য আর্থিক পরিষেবা। এই ব্যাপক পরিসরের সুবিধাগুলোই ডিজিটাল ব্যাংকিংকে আধুনিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছে।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here