More

    বিয়ে না করলে হয়তো নিজের ছেলেকে পেতাম না: শ্রাবন্তী

    টলিউডের জনপ্রিয় ও প্রতিভাবান অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চ্যাটার্জির জীবন যেন এক উন্মুক্ত উপাখ্যান, যা ব্যক্তিগত জীবনের গভীর চড়াই-উতরাই পেরিয়েও তাকে হাসিমুখে পেশাদারিত্বের মঞ্চে অটল রেখেছে। তিন-তিনবার বৈবাহিক সম্পর্কে ভাঙন এলেও, তার এই অসামান্য দৃঢ়তা এবং কর্মপ্রেরণা কখনোই ম্লান হয়নি। যেখানে তার প্রাক্তন দুই স্বামী এখন নতুন করে সংসার পেতেছেন, সেখানে শ্রাবন্তী একাই তার একমাত্র পুত্রকে পরম যত্নে ও ভালোবাসায় বড় করে তুলছেন, যা নিঃসন্দেহে তার চরিত্রের এক উজ্জ্বল ও অনুপ্রেরণামূলক দিক। ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন একজন পাবলিক ফিগারের জন্য কতটা কঠিন হতে পারে, তা বারবার প্রমাণ করেছেন শ্রাবন্তী, কিন্তু তিনি প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন।

    পেশাদারিত্ব এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য: শ্রাবন্তী চ্যাটার্জির এক ব্যতিক্রমী যাত্রা

    এই তিনবার বিয়েবিচ্ছেদ এবং বিচ্ছেদের যন্ত্রণা শ্রাবন্তীর জীবনে কঠিন অধ্যায় হয়ে এলেও, এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব তিনি কখনোই তার সন্তানের উপর পড়তে দেননি। বরং, নিজের ছেলের জন্য তিনি নিবেদিতপ্রাণ একজন মা। একসময় নিজের উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছিলেন, শুধুমাত্র মাতৃত্বের পরিপূর্ণ স্বাদ অনুভব করার জন্য এবং পুত্রকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার জন্য। এটি একজন মায়ের অদম্য ভালোবাসার এক বিরল দৃষ্টান্ত, যেখানে তিনি নিজের সমস্ত ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাকে পেছনে ফেলে সন্তানের ভবিষ্যৎকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। জনসমক্ষে তার এই অটল মানসিকতা এবং সন্তানের প্রতি গভীর ভালোবাসা তাকে একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেছে।

    মাতৃত্বের স্যাক্রিফাইস এবং কর্মজীবনের শুরু

    তার কর্মজীবনের সূত্রপাত ঘটেছিল যখন তিনি কেবল দশম শ্রেণির ছাত্রী। ‘চ্যাম্পিয়ন‘ সিনেমার মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ বক্স অফিসে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছিল। খুব অল্প বয়সেই তিনি দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন, যা তার অভিনয় প্রতিভার এক স্পষ্ট প্রমাণ। ক্যারিয়ারের এই প্রারম্ভিক সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর পরেও ছেলের জন্য বিরতি নেওয়াটা ছিল তার জীবনের একটি অত্যন্ত সাহসী এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। একজন উদীয়মান তারকা হিসেবে এই ধরনের আত্মত্যাগ শুধু তার মায়ের পরিচয়কেই সুদৃঢ় করেনি, বরং তার চারিত্রিক দৃঢ়তারও প্রমাণ দিয়েছে।

    অল্প বয়সে মাতৃত্ব: শ্রাবন্তীর অকপট স্বীকারোক্তি

    মাত্র ১৬ বছর বয়সে, প্রেমের গভীর টানে পরিবারের অমত উপেক্ষা করে তিনি টলিউড পরিচালক রাজীব কুমার বিশ্বাসকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এরপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মাতৃত্বের স্বাদ পান তিনি। ১৭ বছর বয়সে স্কুলের গণ্ডি অতিক্রম করার আগেই তিনি মা হয়েছিলেন, যা ছিল তার জীবনের এক অপ্রত্যাশিত বাঁক। এই ঘটনা তার জীবনের গতিপথ পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল এবং তাকে অল্প বয়সেই একজন মা ও দায়িত্বশীল নারী হিসেবে পরিণত করেছিল। এই অধ্যায়টি তার জীবনে একটি গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যা তাকে একদিকে যেমন কম বয়সে পরিণত করে তুলেছিল, তেমনই অন্যদিকে তার মাতৃত্বের বন্ধনকে করেছিল আরও সুদৃঢ়।

    সম্প্রতি এক পডকাস্টে অংশ নিয়ে শ্রাবন্তী তার ব্যক্তিগত জীবনের এই অধ্যায় নিয়ে অকপটে কথা বলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমার কাছে অগ্রাধিকার বা প্রায়োরিটি সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” সেই সময় তিনি নিজের প্রতি মনোযোগ দিতে চেয়েছিলেন এবং নিজের অনুভূতিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি স্বীকার করেন যে, হয়তো এত অল্প বয়সে বিয়ে করার সিদ্ধান্তটি ছিল একধরনের ‘পাগলামি’, কিন্তু তিনি এটিকে ভাগ্যের লিখন হিসেবেই দেখেন। শ্রাবন্তী বিশ্বাস করেন, “যদি সেই সময় বিয়েটা না করতাম, তাহলে হয়তো আমি আমার ছেলেকে, ঝিনুককে, এত ছোটবেলায় পেতাম না।” তার এই উপলব্ধি প্রমাণ করে, প্রতিটি ঘটনাকে তিনি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে সক্ষম এবং জীবনকে তার নিজস্ব শর্তে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

    মা ও ছেলের অটুট বন্ধন

    মাতৃত্বের সেই শুরুর দিনগুলি নিয়ে তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “আমরা যেন একসঙ্গে বড় হয়েছি।” কারণ, যখন তার পুত্র ঝিনুকের জন্ম হয়, তিনি নিজেও ছিলেন বয়সে অনেক ছোট। সেই সময় তার মনে হয়েছিল, ছেলেকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়াটা জরুরি। ছেলের জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত তিনি গভীরভাবে উপভোগ করেছেন। মা এবং ছেলের এই অনন্য সম্পর্কটি শ্রাবন্তীর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা তাকে সব প্রতিকূলতা মোকাবিলায় শক্তি যোগায়। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ব্যক্তিগত জীবনের ঝড় যতই আসুক না কেন, দৃঢ় মনোবল এবং মাতৃত্বের অসীম ভালোবাসা দিয়ে সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। শ্রাবন্তীর এই পথচলা অনেক নারীর জন্যই অনুপ্রেরণামূলক, যারা ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাকে সমান তালে এগিয়ে নিতে চান।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here