বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে আনন্দের নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে ‘নয়া মানুষ’। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে প্রস্তুত এই সিনেমাটি। সম্প্রতি, চলচ্চিত্রটি দুটি ভিন্ন মহাদেশের স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ লাভ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং পাকিস্তানের ওয়ার্ল্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল। এই আমন্ত্রণ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য এক গৌরবময় অর্জন এবং বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলা সিনেমার পদচারণা আরও সুদৃঢ় করার এক ধাপ।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘নয়া মানুষ’
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ‘নয়া মানুষ’ সিনেমাটির এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। দুটি মর্যাদাপূর্ণ উৎসবে আমন্ত্রণ পাওয়ায় চলচ্চিত্রটির বিষয়বস্তু এবং নির্মাণশৈলী বৈশ্বিক দর্শকদের সামনে তুলে ধরার এক দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু চলচ্চিত্রেরই নয়, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার প্রতিও বিশ্ববাসীর আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সিনেমাটির নেপথ্যে কারিগর ও কুশলীরা
আ. মা. ম. হাসানুজ্জামানের মর্মস্পর্শী উপন্যাস ‘বেদনার বালুচরে’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘নয়া মানুষ’। এর সংলাপ ও চিত্রনাট্য রচনা করেছেন গুণী নাট্যকার ও চিত্রনাট্যকার মাসুম রেজা, এবং পরিচালনা করেছেন মেধাবী নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি। একঝাঁক প্রতিভাবান শিল্পী এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে রয়েছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশিস খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান এবং শিশু শিল্পী ঊষশী। তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্রটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
চলচ্চিত্রটির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমন্ত্রণপ্রাপ্তি প্রসঙ্গে মাসুম রেজা তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “নয়া মানুষ পৃথিবীর নানা চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হচ্ছে জেনে আমি ভীষণ আনন্দিত। এর চিত্রনাট্য তৈরি করতে গিয়ে আমাকে সামাজিকতা ও ধর্মের নানা জটিল প্রশ্নের সমাধান করতে হয়েছে, যা ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।” তিনি আরও যোগ করেন, “মূলত এই ছবি আমাদের সমাজে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহাবস্থানের কথা বলে। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রদর্শিত হলে আমাদের সামাজিক জীবনযাত্রার চিত্রটা ফুটে উঠবে এবং দর্শকেরা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটা ধারণা পাবেন। আমি চাই সারা বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষেরা এই ছবিটি দেখুক।” তাঁর এই কথায় চলচ্চিত্রটির গভীর সামাজিক বার্তা এবং নির্মাতাদের সার্বজনীন আবেদন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
উৎসব পরিচিতি ও ‘নয়া মানুষ’-এর অবস্থান
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব। রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত এই উৎসবের ২৪তম আসর ২০২৬ সালের ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র এখানে প্রদর্শিত হবে, যেখানে ‘নয়া মানুষ’ প্রতিযোগিতা করবে উৎসবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগে। এটি শুধু দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের জন্যই নয়, বিশ্বব্যাপী সমালোচকদের কাছেও চলচ্চিত্রটিকে পরিচিত করার একটি বিশাল সুযোগ।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের করাচিতে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি ও শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিলনমেলা। এই উৎসবে ‘নয়া মানুষ’-এর অংশগ্রহণ দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে পাকিস্তানের দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র শিল্পের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
এই দুটি আন্তর্জাতিক উৎসবে ‘নয়া মানুষ’-এর অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি শুধু একটি সিনেমার সাফল্য নয়, এটি দেশের সৃজনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি।
