More

    স্ত্রীকে নিয়ে পরিচালকের আবেগঘন পোস্ট

    বিশ্ববরেণ্য বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ, যিনি তার সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছেন, সম্প্রতি এক গভীর ব্যক্তিগত শোকের মুখোমুখি হয়েছেন। তার দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গিনী ও সহধর্মিণী নীলাঞ্জনা ঘোষের প্রয়াণে শোকাচ্ছন্ন এই পরিচালক সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের সফল কর্মজীবনের পেছনে তার স্ত্রীর অবিচল সমর্থন ও অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। তার এই আবেগঘন প্রকাশভঙ্গি একদিকে যেমন ব্যক্তিগত ক্ষতির বেদনা ফুটিয়ে তুলেছে, তেমনই একজন মহীয়সী নারীর নীরব অবদানের এক নিদারুণ চিত্র তুলে ধরেছে।

    গত ১৮ অক্টোবর ৭০ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন গৌতমপত্নী নীলাঞ্জনা ঘোষ। তার জীবন কেবল একজন প্রখ্যাত পরিচালকের স্ত্রী পরিচয়ে সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবী এবং কুটিরশিল্প অনুরাগী। বিশেষত তার হাতের সুনিপুণ কাঁথাশিল্প শুধু শিল্পপ্রেমীদের মুগ্ধ করত না, বরং গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অনন্য প্রতিচ্ছবি বহন করত। সমাজসেবার প্রতি তার গভীর দায়বদ্ধতা এবং নিরলস পরিশ্রম তাকে বহু মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছিল। তার প্রয়াণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোক প্রকাশ করে নীলাঞ্জনার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলেন, যা তার সামাজিক অবদানের ব্যাপ্তি প্রমাণ করে।

    জীবনসঙ্গিনীর প্রতি পরিচালকের কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

    পরিচালক গৌতম ঘোষের শিল্পযাত্রায় নীলাঞ্জনা ঘোষের ভূমিকা যে কতটা গভীর ছিল, তা তার কথায় স্পষ্ট। তিনি বলেন, “নীলাঞ্জনাকে পাশে না পেলে হয়তো আমার পক্ষে এত দীর্ঘ সময় ধরে সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব হতো না। আমার কর্মজীবনের প্রতি পদক্ষেপে নীলাঞ্জনা আমাকে এক নিবিড় ছায়ায় আগলে রেখেছিলেন, যা আমাকে নির্ভার মনে কাজ করার স্বাধীনতা দিতো। তিনি আমার প্রতিটি কাজে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন, যা ছিল আমার এগিয়ে যাওয়ার মূল শক্তি।” একজন মানুষ হিসেবে এবং একজন শিল্পী হিসেবে নিজের সম্পূর্ণ সত্তার পেছনে নীলাঞ্জনার অবদানকে স্মরণ করে গৌতম ঘোষ আরও যোগ করেন, “আজ আমি যা, যতটুকু হয়েছি – তার সবটাই ওর জন্য।” এই কথাগুলো শুধু স্ত্রীর প্রতি তার অপরিসীম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাই প্রকাশ করে না, বরং একজন জীবনসঙ্গিনীর নিঃশর্ত আত্মত্যাগের এক অনন্য উদাহরণও স্থাপন করে।

    সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সমালোচক সংগঠন ‘ফিপ্রেসকি’ (FIPRESCI) তাদের শতবর্ষ উদযাপন করছে। এই বিশেষ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক বিনোদন জগতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরিচালক গৌতম ঘোষকে ‘জীবনকৃতি সম্মান’ প্রদান করা হয়। এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রাপ্তি বিশ্বজুড়ে তার চলচ্চিত্রকর্মের এক বিশাল স্বীকৃতি। এই সম্মাননা প্রাপ্তির মুহূর্তেই গৌতম ঘোষের মনে গভীর ভাবে ধরা পড়ে নীলাঞ্জনার স্মৃতি। হয়তো এই বড় প্রাপ্তি যখন এসেছে, তখন তার জীবনসঙ্গিনী পাশে নেই, যিনি এতদিন তার সব সাফল্যে নীরবে অংশীদার ছিলেন। এই অনুভূতি তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তার স্ত্রীর অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী সমর্থনের কথা, যা তাকে এই উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল।

    এই সম্মান প্রাপ্তির পর স্বাভাবিকভাবেই তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অবসরের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে গৌতম ঘোষ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আপাতত অবসরের কোনো পরিকল্পনা নেই। এই সম্মান লাভ কোনোভাবেই আমাকে কর্মবিরতির দিকে ঠেলে দেবে না, বরং নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রেরণা জোগাবে।” তার এই মন্তব্য প্রমাণ করে যে শিল্পের প্রতি তার দায়বদ্ধতা আজও অক্ষুণ্ন। জীবনের এই কঠিন সময়েও তিনি তার শিল্পসৃষ্টির প্রতি অবিচল রয়েছেন, যা একজন প্রকৃত শিল্পীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

    Recent Articles

    Related Stories

    Leave A Reply

    Please enter your comment!
    Please enter your name here