বলিউড জগতে নিজস্ব মেধা ও অনবদ্য উপস্থিতি দিয়ে নিজের আসন পাকাপোক্ত করেছেন অভিনেত্রী সারা আলী খান। ‘কেদারনাথ’ এর মতো আবেগঘন অভিষেক থেকে শুরু করে ‘সিম্বা’র মতো ব্লকবাস্টার হিট, ‘আতরঙ্গি রে’ এর মতো ভিন্নধর্মী গল্প এবং সাম্প্রতিক সময়ে প্রশংসিত ‘মেট্রো ইন দিনো’—এর মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ চলচ্চিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় তাকে দর্শকদের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান করে দিয়েছে। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডটকম-কে দেওয়া এক অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকারে তিনি উন্মোচন করেছেন তার কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার নেপথ্য রহস্য, যার অনুপ্রেরণা হিসেবে তিনি তার বাবা, প্রখ্যাত অভিনেতা সাইফ আলী খানকে উল্লেখ করেছেন।
বাবার প্রভাব: সাফল্যের মাঝেও বিনয় ও ব্যক্তিগত সুখের গুরুত্ব
বাবা সাইফ আলী খান ও মা অমৃতা সিংয়ের বিচ্ছেদের পর সারা মায়ের সঙ্গেই জীবনযাপন করলেও, বাবার সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও সুদৃঢ়। সারা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করেছেন যে, কর্মজীবনের সাফল্যের পেছনে নিরলস পরিশ্রম যেমন অপরিহার্য, তেমনই ব্যক্তিগত সুখ ও মানসিক শান্তিকে গুরুত্ব দেওয়াও সমান জরুরি—এই মূল্যবান শিক্ষাটি তিনি তার বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন। তিনি বলেন, “কাজের মূল্য অবশ্যই দিতে হয়, তবে ব্যক্তিগত সুখকেও যে গুরুত্ব দিতে হয়, এটাই বাবা আমাকে শিখিয়েছেন।” এমনকি খ্যাতির শিখরে পৌঁছেও কীভাবে মাটির কাছাকাছি থাকা যায় এবং বিনয়ী জীবনযাপন করা যায়, সেই পথচলার দিশাও তিনি সাইফের কাছ থেকেই লাভ করেছেন। এই অমূল্য শিক্ষাগুলোই তার জীবনের পাথেয় হয়ে উঠেছে, যা তাকে প্রতিটি পদক্ষেপে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
ব্যক্তিগত সময় ও সৃজনশীলতার উৎস: বই এবং ভ্রমণ
ব্যস্ত সময়সূচীর মাঝেও সারা নিজের জন্য গুণগত সময় বের করতে ভালোবাসেন। তার প্রিয় শখগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বই পড়া এবং নতুন শহর ও সংস্কৃতি অন্বেষণ করা। এই দুটি শখই তাকে নতুন করে ভাবতে শেখায় এবং তার সৃজনশীলতাকে আরও জাগিয়ে তোলে। অভিনেত্রী বলেন, “আমি গল্পের গভীরে হারিয়ে যেতে পছন্দ করি। বই আমাকে বিভিন্ন জগতে নিয়ে যায় এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।” একইভাবে, ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি এক স্থির ও শান্ত মন খুঁজে পান। প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা কেবল তার জ্ঞানকেই বৃদ্ধি করে না, বরং তার শিল্পসত্তাকে আরও জাগিয়ে তোলে, তাকে নতুন করে ভাবতে ও অনুভব করতে শেখায়। কর্মজীবনের বাইরে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই তাকে নতুন উদ্যমে কাজ করার শক্তি যোগায়, তাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখে এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: এক বন্ধুর মতো, কখনো আনন্দ, কখনো চাপ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সারা এক অদ্ভুত বন্ধুর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার ভাষ্যমতে, “আমার কাছে সোশ্যাল মিডিয়া সেই বন্ধুর মতো, যে কখনো আনন্দ দেয়, কখনো আবার বাড়াবাড়ি করে ফেলে।” এটি মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং সৃজনশীলতা প্রকাশের একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম। তবে এর সঙ্গেই আসে সমালোচনা, অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করার প্রবণতা এবং সর্বদা নিখুঁত দেখানোর এক অদৃশ্য চাপ। সারা এই বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করতে পছন্দ করেন এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বর্জন করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, তার প্রকৃত মূল্য কখনোই ‘লাইক’ বা ‘ফলোয়ার’-এর সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না, বরং তা তার কাজ এবং ব্যক্তিগত মূল্যবোধের উপর নির্ভরশীল।
অভিনয় না করলে হয়তো শায়েরা হতেন!
অভিনয়ের জগতে না এলে তিনি কী হতেন, এই প্রশ্নের উত্তরে মৃদু হেসে তারকা-কন্যা জানান, যদি তিনি অভিনেত্রী না হতেন, তবে হয়তো একজন ‘শায়েরা’ বা কবি হতেন। কারণ শব্দের মাধ্যমে গল্প বলা এবং মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার প্রতি তাঁর গভীর টান রয়েছে। নিজের অনুভূতির প্রকাশ এবং দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এই ইচ্ছা থেকেই হয়তো তিনি অভিনয়ে এসেছেন, তবে শব্দের জাদুতেও তার এক বিশেষ আকর্ষণ বিদ্যমান।
